বাংলাদেশ থেকে অনেক নারী পুরুষ প্রতিবছর মধ্যপ্রচ্যের দেশ সহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকে এবং সেখানে তারা বিভিন্ন কর্মে জড়িত আছেন। তবে দেখা যায় বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোতে প্রবাসী বেশি। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও বিদেশগমন বেড়েছে। তবে অর্থ উপার্জনের জন্য বিদেশে গিয়ে অনেকেই নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন এবং দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করেও কোন লাভ হচ্ছে না।
সৌদি আরবে মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন হবিগঞ্জের এক তরুণী। তাই দেশে ফিরতে ভিডিও কলে তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন তিনি।
এরই মধ্যে কান্নাজড়িত কন্ঠে ওই তরুণীর দেশে ফেরার আকুতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। নির্যাতনে শিকার তরুণী শিল্পী আক্তার জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের তৈইগাঁও গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী কান্না জড়িত কণ্ঠে তার মায়ের কাছে বলছেন, ‘তুমরার কাছে আমি ভিক্ষা চাই। আমারে দেশে ফিরাইয়া নেও। তিন বছর ধইরা আমারে আটকাইয়া রাখছে। আমারে ধরে-মারে। মালিকে মারে, মালিকের পুলা-পুইরে মারে। আমারে খানি দেয় না, একবার দিলে- আরেকবার দেয় না। ঘরের ভেতরে তালা মাইরা তরাকে। দেশে ফিরাইয়া না নিলে আমারে মাইরালাইব, লাশ কইরা বাংলাদেশে পাঠাইব।’
শিল্পীর মা নূরচাঁন বিবি জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিলে সৌদি আরব যায় তার কন্যা শিল্পী আক্তার। সেখানে যাওয়ার পর একটি বাসায় গৃহকর্মীর চাকরি নেয় সে। কিন্তু সেই বাসাটি সৌদি আরবের কোন এলাকায় সেটি নিশ্চিত নন তিনি। সেখানে যাওয়ার পরই তার ওপর চলে নির্যাতন। কাজে ছোটখাট ভুল হলেই মারধরের শিকার হয় শিল্পী। প্রতিনিয়ত তাকে নির্যাতন করেন বাসার মালিক, ছেলে ও মেয়েরা।
প্রথমে মা-বাবা ও অস্বচ্ছল পরিবারের কথা চিন্তা করে সব নির্যাতন নিরবে সহে যান শিল্পী। কথা ছিল দুই বছর সেখানে থাকার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু দুই বছর অতিক্রম হলেও তাকে দেশে পাঠানো হয়নি। উল্টো ভিসার মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে। দেশে আসার কথা বললে শিল্পীর ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে বর্তমানে শিল্পী অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন। মা বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেয়া হয় না।
নূরচাঁন বিবি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চাই। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে দিচ্ছে না। ট্রাভেলসের লোকেরাও আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে না। তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ আমার মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনার।’
শিল্পীর বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘সংসারে অভাবের কারণে মেয়েকে সৌদিআরব পাঠিয়েছিলাম। এখন আমার মেয়ে খুব কষ্টে আছে। আমি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চাই।’
তিনি বলেন, ঢাকার পুরানাপল্টন এলাকার ‘৪ সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’র মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছিল শিল্পী।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক খালেদ হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- ‘আমরা মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে এক মাস আগে অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’
সৌদি আরবে কর্মের জন্য গিয়ে এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এক নারী।এই ঘটনা নিয়ে মেয়েটির পরিবার বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে এই বিষয় নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ দিলে দুতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’