Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / তিন কারণে শক্তি লাভ করছে বিএনপি এবং চাঙা হচ্ছে নেতাকর্মীরা

তিন কারণে শক্তি লাভ করছে বিএনপি এবং চাঙা হচ্ছে নেতাকর্মীরা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ইতিমধ্যে দলটি ঢাকা ও ময়মনসিংহে দুটি বড় ধরনের সমাবেশ করেছে, যেটা অনেক সফল হয়েছে। তাদের সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে, যেটা জানান দিল যে, বিএনপি শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এতে করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন উদ্যোমে উজ্জীবিত হচ্ছে বিএনপি, শক্তি ফিরে আসছে নেতাকর্মীদের মনে। হাম”লা ও নির্যাতিত হওয়ার সত্ত্বেও সকল ধরনের বাধা উপেক্ষা করে রাজপথে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। গণসমাবেশ রূপ নিচ্ছে গণসংযোগে। এতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাড়ছে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস।

দলটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা। হাম”লা-মামলা-বিধ্ব”/স্ত দল প্রাণ ফিরে পেয়েছে। যারা দেশে বিএনপি নেই বলে সমালোচনায় ব্যস্ত ছিলেন, তাদের এখন ভিন্ন সুর। বিএনপির এই উত্থানের পেছনে কী ‘টনিক’ তা নিয়েই আলোচনা সর্বত্র। দলের নীতিনির্ধারক ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি কারণে দলটি উজ্জীবিত।

এগুলো হলো-১. সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। ফলে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামলে জনগণও সাড়া দেবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সমাবেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে তা টের পাওয়া যাচ্ছে।

২. অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিদেশীদের থেকে অব্যাহত চাপ। আগের দুই নির্বাচনের মতো এবারও একতরফাভাবে ভোট করতে পারবে না ক্ষমতাসীনরা। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। সবকিছু মিলে ‘কিছু একটা হবে’ নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন আস্থা তৈরি হয়েছে।

৩. সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকায় দলীয় সরকারের অধীনে সহজে নির্বাচন করতে পারবে না ক্ষমতাসীন দল।

অতীতে যারা নিষ্ক্রিয় ছিল তারা খোলস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসছে। শুধু নেতাকর্মীরাই নয়, দলের সমর্থকরাও এখন বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। ২২শে আগস্ট থেকে জনসাধারণের ইস্যুতে তৃণমূলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। এসব সমাবেশে অনেক জায়গায় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়। কিন্তু তারা হামলা মানছে না এমনকি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। আগে পুলিশকে দেখে নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলেও এখন প্রতিরোধ করছে। তৃণমূলের পর রাজধানীর ১৬টি স্পটে নেতাকর্মীদের বন্যা। কোনো কোনো স্থানে ক্ষমতাসীন দল বাধা দিতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীরাও প্রতিবাদ করেন। রাজধানীতে কর্মসূচি শেষে ১০টি বিভাগীয় সভায় গণসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এই দুই গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অবাক করেছে সবাইকে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বাধা ও গণপরিবহন স্থগিত হওয়ার পর এমন উপস্থিতিতে দলটি উজ্জীবিত। সবার মধ্যে ‘ডু অর ডা”ই’ মনোভাব আছে। নেতাকর্মীদের এমন উচ্ছ্বাস আগামী দিনে রাজপথের কর্মসূচিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ভেবেছিল নি’র্যা/’তন ও মামলা দিয়ে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে ধ্বং”স করে দেবে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ বিএনপি জনগণের দল। এর একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি রয়েছে। নি”র্যা’/তনের পরও একজন নেতাও দল ছাড়েননি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের আস্থা রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

‘ওয়ান-ইলেভেন’-এর পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মামলা-মোকদ্দমা ও সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তারে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর দলের নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েন। তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি। এ সময় দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। একপর্যায়ে হাইকমান্ড সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে সরে এসে দলকে সংগঠিত করার দিকে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু নানা কারণে তারা সেখানে সফল হতে পারেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে চরম পরাজয়ের পর নেতাকর্মীদের মনোবল পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। নেতাকর্মীদের শক্তিশালী করতে নিয়মিত বৈঠক করে হাইকমান্ড।

দল পুনর্গঠনে বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা-উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়। সব কমিটিতে যোগ্য, তরুণ ও সাহসীকে শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হয়। অতীতে কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সঠিকভাবে কাজ করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। তকিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেজন্য তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়। তাই দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ পায়নি কেউ। দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনের কৌশল নিয়ে একাধিকবার তৃণমূল নেতাদের মতামত নেওয়া হয়। এসব বৈঠকে আন্দোলন সফল না হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন অনেকে। অনেকেই কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে নামেন না। এই আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। তারা এগিয়ে থাকলে নেতাকর্মীরা যেকোনো ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নামবেন। তৃণমূলের এমন আহ্বানে কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের সামনে শপথ নেন, যত বাধাই আসুক না কেন, আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকবেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

কেন্দ্রীয় নেতাদের রাজপথে সক্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেয় হাইকমান্ড। অতীতে শুধুমাত্র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতেন। ফলে দেখা গেছে অনেক জায়গায় অনুষ্ঠান পালিত হয়নি। আবার কোথাও ফটো সেশন করে দায়িত্ব শেষ করতেন। সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে দলটি। কেন্দ্র ঘোষিত তৃণমূলের কর্মসূচিতে সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জেলায় জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় নেতাদের। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় শুধু কর্মসূচি পালনের জন্য নয়, তৃণমূল পর্যায়ে কোনো দ্বন্দ্ব আছে কিনা তা সমাধান করারও। প্রতিটি কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাহস যোগায়। যারা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারাও যোগ দিচ্ছেন কর্মসূচিতে। শুধু তাই নয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতারা তৃণমূল ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন। এতে তাদের মধ্যেও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। অতীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আহত ও প্রয়াত নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি কেন্দ্র। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। অতীতে যারা প্রয়াত ও আহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে হাইকমান্ড। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে অনেকেই রাস্তায় ঝুঁকি নিচ্ছেন।

বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, আগামী নির্বাচন অতীতের মতো একতরফা হবে না- এমন আস্থা রয়েছে সবার মধ্যে। ক্ষমতার পরিবর্তন হতে পারে এমন আশায় ঝুঁকি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, এবার আন্দোলন ব্যর্থ হলে আগামীতে বিএনপির রাজনীতি করা কঠিন হবে। দেশে থাকলেই মামলার দায়িত্ব থাকবে। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে অধিকাংশ নেতাকর্মীকে কারা”গারে কাটাতে হতে পারে। নির্যাতনের মাত্রা বর্তমানের চেয়ে আরও বাড়তে পারে। তাই তাদের অস্তিত্বের জন্য রাজপথে নামা ছাড়া বিকল্প নেই।

তারা মনে করেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার বিদেশিদের চাপে রয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে, তারা আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায়। যেসব দেশ সরকারের খুব কাছাকাছি ছিল তারাও আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বিদেশিদের চাপে দেশের ভেতরে গণআন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হলে সরকার বেকায়দায় পড়বে। নির্বাচনকালীন সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হলে ফলাফল কী হবে তা সবারই জানা। এমন সমীকরণ থেকেই নেতাকর্মীরা রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোও মনে করছে ক্ষমতাসীন দল এবার সহজে নির্বাচন করতে পারবে না। এমন ভাবনা থেকেই ডান-বাম-ইসলামি দলগুলোও বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়তে রাজি হয়েছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবাই রাজপথে এলে ইতিবাচক ফল আসবে বলে মনে করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

জানতে চাইলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। দেয়ালটাও অনেক উঁচু। এটা টপকানো যাবে না। তাই তারা তাদের অস্তিত্বের জন্য সকল বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুই তাদের থামাতে পারবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে না।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দিক থেকে অনেকটা চাপে পড়েছে, কারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ দেশে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার বিষয়টি আ.লীগকে চাপে ফেলেছে। দেশের জনসাধারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেকটা সংকীর্ণভাবে জীবন যাপন করছে এবং সেইসাথে আওয়ামী লীগ নেতারা উন্নয়নের কথা বললেও ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে তেলের দাম বৃদ্ধি করা সহ বিভিন্ন দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার বিষয়টি একটি বড় ধরনের বিষয় হয়ে উঠেছে। যেটা সরকারের জন্য একটি ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে সাধারন মানুষেরা।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *