হঠাৎ করেই দেশে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে চলছে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা। এবং বাদি উঠেছে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার। এই নিয়ে প্রায় সময় দেশের অনেক রাজনীতিবীদ নানা ধরনের কথা বলছেন। সম্প্রতি ড. রেজা কিবরিয়া আগামী নির্বাচন এবং বর্তমান সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে বেশ কিছু কথা তুলে ধরেছেন।
নবগঠিত রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১২ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না। তারা বিরোধী দলও হবে না। সংসদে পাঁচ নম্বরে থাকবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের জন্য আমার বাবা প্রাণ দিয়েছেন। দলটা বিলুপ্ত হোক- চাই না। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা জাতীয় সরকার অথবা জাতিসংঘের অধীনে। সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রশ্ন : আপনার বাবা প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী। কিন্তু আপনি রাজনীতিতে এলেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের হয়ে। নির্বাচন করলেন বিএনপির প্রতীকে। সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েও গণফোরামে থাকেননি। জামায়াতের সাবেক নেতা মুজিবুর রহমান মনজুর এবি পার্টির কর্মসূচিতে ক’দিন অতিথি হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভিপি নুরুল হকের দলের আহ্বায়ক হলেন। তিন বছরে এত পরিবর্তন! অস্থিরচিত্ত, নাকি রাজনীতিতে সুযোগসন্ধানী বলব?
রেজা কিবরিয়া : বাবা যে আওয়ামী লীগে ছিলেন, তা এখন নেই। আমি আগের আদর্শেই আছি। আওয়ামী লীগ আদর্শ থেকে সরে গেছে। তারা এখন গণবিরোধী।
প্রশ্ন : ২০১৮ সালে অভিযোগ করেছিলেন, আওয়ামী লীগ আপনার বাবার হ/ত্যা/র নিরপেক্ষ বিচার করেনি। এখনও তা-ই মনে করেন?
রেজা কিবরিয়া : অবশ্যই। তবে এটাই আমার রাজনীতিতে আসার একমাত্র কারণ নয়। দেশটা ভুল পথে চলছে। তারা দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। বিরোধী দল যারা আছে, তারাও পারছে না। তাই আসা।
প্রশ্ন : সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীরা কিন্তু বলছে, উন্নয়নের ঠিক পথে আছে বাংলাদেশ। আর আপনি অক্সফোর্ডে অধ্যাপনা করা, আইএমএফে কাজ করা অর্থনীতিবিদ হয়েও ভুল বলছেন?
রেজা কিবরিয়া : উন্নয়নের জিকির হলো যে কোনো স্বৈরাচারের লেবাস। যে উন্নয়ন বাংলাদেশে হয়েছে, তা জনগণের জন্য হয়নি। ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতু যা কিছু হয়েছে লুট/পা/টের জন্য। দ্বিগুণ-তিন গুণ খরচ করে প্রকল্প করা হচ্ছে।
প্রশ্ন : আপনি বললেন- ‘যে বিরোধী দলগুলো আছে, তারা পারছে না।’ কেন পারছে না? ২০১৮ সালের নির্বাচনে আপনিও প্রার্থী ছিলেন। বিরোধী জোট ব্যর্থ হলো কেন?
রেজা কিবরিয়া : সহজ উত্তর- রাতের ভোট। হবিগঞ্জে ১৭২টি কেন্দ্রের ১৫০টি দখল করে নেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন : আপনি ফলের কথা বলছেন, যা সবারই জানা। আপনারা যে কারচুপির কথা বলেন, তা ঠেকাতে পারেননি কেন?
রেজা কিবরিয়া : ঠেকানো যেত। এতে নি/র/স্ত্র মানুষকে পু/লি/শ, প্রশা/স/নের সঙ্গে সং/ঘ/র্ষ করতে হতো। অনেক মানুষের প্রাণ যেত।
প্রশ্ন : আপনি পু/লি/শ ও প্রশা/সনে/র পক্ষপাতের কথা বলছেন। তারা যেন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে কিংবা ভবিষ্যতের নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকে- সেই চেষ্টা কি ২০১৮ সালে ছিল বা এখন আছে?
রেজা কিবরিয়া : এর উত্তর দিতে পারছি না।
প্রশ্ন : ভোটের পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হলেন। ছাড়লেন কেন?
রেজা কিবরিয়া : ড. কামালকে দেখে গণফোরামে গিয়েছিলাম। তাকে এখনও শ্রদ্ধা করি। কিন্তু দলে বাকি যারা আছে, তারা নির্বাচনমুখী নয়। আমি নির্বাচনমুখী মানুষ। নির্বাচনে যাদের আগ্রহ নেই, তাদের সঙ্গে থেকে লাভ নেই।
প্রশ্ন : আপনার নতুন দল গণঅধিকার পরিষদ কি নির্বাচনমুখী দল?
রেজা কিবরিয়া : অবশ্যই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মোটামুটি ভালো করব।
প্রশ্ন : জোট করবেন কার সঙ্গে?
রেজা কিবরিয়া : ভোটের আরও দুই বছর আছে। তখন দেখা যাবে জোটের বিষয়। আওয়ামী লীগ গণধিক্কৃত হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না।
প্রশ্ন :তাহলে কি বিএনপি?
রেজা কিবরিয়া : গত ১২ বছরে যেসব অন্যায় হয়েছে, তাতে বিএনপির ভূমিকা নেই। তবে জোটের কথা আসবে ভোটের আগে। আমরা ৩০০ আসন ধরেই প্রস্তুত হবো।
প্রশ্ন :আপনার দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর তো বলেছেন- ‘সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে প্রয়োজনে জামায়াতের সঙ্গে জোট হবে।’
রেজা কিবরিয়া : কোনো দলের কথা বলেনি। এটা আওয়ামী লীগের দালালদের প্রচার। তারা সবকিছুতে জামায়াতকে টেনে আনে। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে দল কাজ করতে রাজি, তাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করব। গণতন্ত্র ফেরত আনতে কারও সঙ্গে মতপার্থক্য থাকলেও কাজ করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা ‘৯৬-এ জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। জামায়াত ‘৯৬-এ ৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখন একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার ধারণা, আওয়ামী লীগ ১২ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না। তাদের জন্য ৪-৫ শতাংশ ভোটের দল জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন :প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা একাধিকবার শক্তিশালী বিরোধী দলের কথা বলেছেন। আপনারা কি সেই বিরোধী দল? এ কথা বলছি, কারণ আপনি ও নুরুল হক নুর ভাসানীর মাজারে আক্রান্ত হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিন্দা করেছেন। বিএনপির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে এ ধরনের সহানুভূতি দেখা যায় না। আপনাদের প্রতি এ ‘ভালোবাসার’ কারণ কী?
রেজা কিবরিয়া : আমাদের এবং নুরুল হক নুরের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে দেশে-বিদেশে। আমেরিকায় আগামী মাসে গণতন্ত্র সম্মেলনে ১৩২ দেশ দাওয়াত পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ পায়নি। কারণ, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার। এর চেয়ে লজ্জার কী আছে! এসব লজ্জা ঢাকতে হয়তো আমাদের ওপর হা/ম/লা/র নিন্দা করেছে। আর তাদের পোষা বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তো আছেই। ৮৫ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের বিরোধী। তাই শক্তিশালী বিরোধী দল না খোঁজাই তাদের জন্য ভালো।
প্রশ্ন :আপনাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা কী? নির্বাচনে যাবেন? চলমান ইউপি নির্বাচনে তো গেলেন না।
রেজা কিবরিয়া : গত দুইবার যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, সেভাবে হলে যাব না। আমরা তিনটি পদ্ধতির কথা বলছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জাতীয় সরকার কিংবা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন। আর আমাদের দল মাত্র এক মাসের। এখনই চেয়ারম্যান-মেম্বার হওয়ার দৌড়ে নামতে চাই না। আগে একটু গুছিয়ে উঠি।
প্রশ্ন :আপনিই বারবার বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হবে। বিলুপ্তির ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগ কেন সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে? ১৯৯৬ সালে দলটি আন্দোলন করে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করেছিল। আপনারা কী করবেন?
রেজা কিবরিয়া : স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন একদিন হবেই। স্বৈরাচারের পতন হবেই।
প্রশ্ন : বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশি-বিদেশি নানা শক্তির প্রভাব থাকে। ধারণা করা হয়, সব প্রভাবকই আওয়ামী লীগের পক্ষে।
রেজা কিবরিয়া : দুই-একটা শক্তি পক্ষে আছে। বাকিরা শক্তভাবে বিরোধিতা করছে না।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামীলীগ দল। এই দলটির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ভোট কারচুপি ও জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছে দলটি এমনও অভোযগ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহনে আপত্তি জানিয়েছে দেশের রাজনৈতিক দল গুলো।