Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / তিনটি কারণে হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচী থেকে সরে এলো বিএনপি

তিনটি কারণে হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচী থেকে সরে এলো বিএনপি

লাগাতার হরতাল-অবরোধ করে নির্বাচন ঠেকাতে সর্বাত্মক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিএনপি। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় পর্যালোচনা করে দলের নীতিনির্ধারকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

কর্মসূচি নির্ধারণে দলের চারটি সাংগঠনিক বিভাগের শতাধিক নেতা ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠকের পর নতুন কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হন দলের নীতিনির্ধারকরা।

কয়েক সপ্তাহ আগে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোও লাগাতার কর্মসূচি দিতে রাজি হয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলেন, নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনা এবং সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য তাঁদের প্রভাবিত করেছে। সব দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর চেয়ে ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিন কারণে কৌশলী হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। প্রথমত, নেতারা এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেন যে, অকল্পনীয় কিছু না ঘটলে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। ফলে নির্বাচন ঠেকাতে দলটি এমন কর্মসূচি দিতে চায় না, যাতে ব্যর্থ হলে নেতাকর্মীরা হতাশ। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের আগে দেশে না”শকতা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা হতে পারে।

ফলে নির্বাচনের পর বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া হতে পারে। তৃতীয়ত, নির্বাচনের পর কিছুদিন চলমান আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায় বিএনপি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতির কঠোর প্রয়োগ এবং নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করলে তারা কর্মসূচি পালনের পরিবেশ বজায় রাখার চলমান আন্দোলন শেষ করতে চায় না।

এমন বাস্তবতায় ভোটগ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে আগামী তিনদিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোটের আগের দিন শনিবার এবং শুক্রবার কর্মসূচি থেকে বিরতি নিয়ে ভোটের দিন হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন এগিয়ে নেওয়া হবে। আমরা কখনই নাশকতার সঙ্গে জড়িত নই, অন্য কোনো দলকেও না”শকতার সুযোগ দিতে চাই না।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল এবং ১২ দফায় ২৪ দিন অবরোধ কর্মসূচি করে বিএনপি। এরপর ভোট ঠেকাতে জনগণকে ভোট বর্জনের পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। যদিও অসহযোগ আন্দোলনের কার্যকারিতা নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জনগণকে ভোট প্রদানে নিরুৎসাহ করতে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ১০ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে বিএনপির সন্দেহ

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সারা দেশে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বাস্তবতা তুলে ধরেন। অনেকে বলেন, নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ কম। বেশির ভাগ নেতাকর্মী ঘরছাড়া, হয়রানিতে আছে তাঁদের পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে ভোট ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভোট ঠেকানোর কর্মসূচিও জোরালোভাবে পালিত হবে না।

এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্য নিয়ে বিএনপি নেতারা সন্দেহ পোষণ করেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা খবর পাচ্ছি- নির্বাচনকে ঘিরে সব আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন গুপ্তহ”ত্যায় যাবে।’

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি মনে করছে ২৮ অক্টোবরের মতো আরেকটি ‘ব্লুপ্রিন্ট’ তৈরি করছে সরকার। বড় ধরনের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হতে পারে। হরতাল-অবরোধের মধ্যে বাস-ট্রেনে আগুন দিয়েছে সরকারি দলের নেতারা। এসব ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা উচিত বলে দেশি-বিদেশি উভয়েই বিশ্বাস করেননি। এখন বড় ধরনের নাশকতা ঘটিয়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করতে চায় সরকার।

স্থায়ী কমিটির এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের বিষয়ে বিবৃতি পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ জানানো হয়।

বিবৃতিতে রিজভী বলেন, এ বক্তব্য ক্ষমতাসীন দলের গভীর ষড়যন্ত্র ও নীলনকশার অংশ। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের মদদে আওয়ামী লীগ অপকর্মের রাজনীতির পুনরাবৃত্তি করে অন্যের ওপর দায় চাপানোর চক্রান্ত করছে। বিএনপি সম্পর্কে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য ঘৃণ্য, নিন্দনীয় ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৭ হাজারের বেশি নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। এ অবস্থায় পুলিশ কঠোর কর্মসূচি দিলে আরও কঠোর হবে। সড়ক কর্মচারীদের পদ শূন্য হলে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি পালন করা কঠিন হবে।

ভোটার দিনটাই চ্যালেঞ্জ

আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিএনপি। সরকারবিরোধী কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে যেতে না পারেন সেজন্য এদিন জনমত গঠনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। চলমান গণসংযোগে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতাদের এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা জানান, এবার কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ভোটারদের অনেক চাপ রয়েছে। এ জন্য ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে একটু সাহসী ও কৌশলী হতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, অনেক প্রার্থীই ভোট দিতে আগ্রহী নন। কে হবেন এমপি সেটা চূড়ান্ত। ৭ই জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে। ফলে কোনো সচেতন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে না।

তিন দিন ধরে গণযোগাযোগ বেড়েছে

ভোট বর্জনে দেশব্যাপী চলমান গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি আরো তিন দিন বাড়িয়েছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।

গতকাল দুপুরে ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কর্মসূচির মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

গত ২১ ডিসেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত ১০ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *