তাহের সম্পর্কে ইলিয়াসের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানালো জামায়াত

প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার ইউটিউব চ্যানেলে “আসিফ নজরুল মন্ত্রণালয়ের কাজ বাদ দিয়ে ইউটিউবারদের পেছনে দৌড়াচ্ছেন” শিরোনামে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন যে, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ভারতের লবিং মেইনটেইন করেন। জামায়াতে ইসলামী এ মন্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ এক বিবৃতিতে এ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শিক দল এবং এর সব কার্যক্রম সম্পূর্ণ প্রকাশ্য। ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরসহ দলের কোনো নেতাকর্মী অন্য কোনো দেশের সঙ্গে লবিং করেন না। দলের প্রত্যেক সদস্য দলীয় আদর্শ ও নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হন।”

বিবৃতিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।


অবশেষে প্রকাশ হলো সালমান এফ রহমানের খেলাপি ঋণের হিসাব, দেশজুড়ে চাঞ্চল্য

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের তালিকা থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন দেশের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকোর কর্ণধার সালমান এফ রহমান। অবশেষে জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ঘেঁটে তার ঋণের প্রকৃত চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো সালমান এফ রহমানকে ঋণখেলাপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো, যা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

জনতা ব্যাংকের একটি শাখা থেকেই প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন তিনি, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। এ ঋণগুলোর একটি বড় অংশই বেনামি ছিল, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে সালমান এফ রহমানের নামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

সালমান এফ রহমানের নাম বেনামি ঋণের জনক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ব্যাংক খাতে বেনামি ঋণের প্রচলন তার হাত ধরেই শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে পুরো খাতে ছড়িয়ে পড়ে। জনতা ব্যাংক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এর ব্যাপকতা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বর্তমানে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী বেনামি ঋণের সুবিধা ভোগ করছেন।

একজন ব্যাংকার জানান, বেনামি ঋণ হলো এমন এক লেনদেন, যেখানে ঋণ নেন একজন, কিন্তু এর সুবিধাভোগী হন অন্য কেউ। এটি ব্যাংক খাতের দুর্নীতির একটি মারাত্মক দিক। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বেনামি ঋণগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা না নেয়, তবে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ধরে রাখা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেক্সিমকো গ্রুপ এবং এর অধীনস্থ ৩২টি প্রতিষ্ঠানের নামে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে প্রায় ২৬ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২২০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে সুকুক বন্ডের মাধ্যমে।

নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করা হলো:

  • অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস: ৬০৯ কোটি টাকা
  • বেক্সিমকো লিমিটেড: ২,২১৬ কোটি টাকা
  • কসমোপলিটান অ্যাপারেলস: ৯৬১ কোটি টাকা
  • শাইনপুকুর গার্মেন্টস: ৩৩৩ কোটি টাকা
  • ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস: ১,২৫০ কোটি টাকা

এছাড়াও, আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা পরে বেক্সিমকো গ্রুপভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যাংকিং প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করা হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যাংকের মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ গ্রহণের নিয়ম থাকলেও, এসব ঋণের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এছাড়া, ঋণের বিপরীতে সঠিক জামানত রাখার বিষয়টিও উপেক্ষা করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সালমান এফ রহমান এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তা পেয়েছেন।

বিপুল পরিমাণ এই ঋণ দেওয়ার সময় জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ। তার সময়ে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ম-নীতি বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির ও পরে আব্দুর রউফ তালুকদার এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন।

বিশেষ করে আব্দুর রউফ তালুকদারের গভর্নর থাকাকালীন সময়েই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি তার প্রশাসনিক প্রভাব ব্যবহার করে আব্দুছ ছালাম আজাদকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করেছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করা জরুরি। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “এ ধরনের আর্থিক অপরাধের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি ব্যাংকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জামানত বাজেয়াপ্ত করা প্রয়োজন।”

তাছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন যে, শুধুমাত্র জনতা ব্যাংক নয়, অন্যান্য ব্যাংকেও এ ধরনের ঋণের বিষয়ে তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য বের করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, সালমান এফ রহমানের খেলাপি ঋণ শুধু একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি। সময় এসেছে, ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় সুশাসন ফিরিয়ে আনার। বেনামি ঋণ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বন্ধ করতে না পারলে, এর প্রভাব পুরো অর্থনীতি জুড়ে পড়তে থাকবে।