কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা বেশি ধান কিনে চালের দাম বাড়াচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দায়ীদের তালিকা চেয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। দায়ী ব্যক্তিদের হাতে হাতকড়া না পরলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বলেও চ্যালেঞ্জ করেছেন মন্ত্রী।
বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে চাল মালিক, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
শুধু রমজান মাসে দাম কমবে এবং ১১ মাস দাম বেশি থাকবে এটা কাম্য নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী পণ্যের দাম কমানো উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা।” এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠনের পর অতিরিক্ত মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাসহ স্থাপনা সিলগালা করা হচ্ছে। আমাদের প্রচারণা শুরু হয়েছিল মজুতদারদের কাছ থেকে যারা চাল কিনে মজুত করে। হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অভিযান না হলে আরও বাড়ত।
এর আগে দেশের কুষ্টিয়ার অন্যতম বৃহৎ স্থান খাজানগরে অভিযান পরিচালনা করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ওই স্থানে যান। এ সময় তিনি একটি মিলের গুদামে থাকা প্রায় ৪০০ টন চাল এবং একটি ময়দা মিলের গুদামে দেড়শ টন গম সিলগালা করার নির্দেশ দেন। এ সময় মন্ত্রী আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।
অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেনকে তিরস্কার করেন মন্ত্রী। তিনি খাদ্য নিয়ন্ত্রককে বলেন, এতদিন এসব অনিয়ম কেন নজরে আসেনি? আমাকে যদি সব দেখতে হয়, তাহলে তুমি এখানে কি করছ?’
মন্ত্রীর সাথে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজাসহ খাদ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তা ও রাইস মিল মালিকদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী জেলার ধান মালিকদের উদ্দেশে বলেন, যারা ধানের দাম বেশি চাচ্ছেন তাদের নাম-ঠিকানা আমাকে দিন। এই বৈঠকে যারা বেশি দাম দাবি করছে তাদের হাতকড়া পরাতে না পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব। আমি তোমাকে একটা চ্যালেঞ্জ দিলাম। এ সময় চালকরা কোনো কথা বলেননি।
সুপারশপগুলো দাম বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “ব্যাগে দামের ট্যাগ লাগিয়ে চাল সুপারমার্কেটে যায়। যারা সুপারশপ থেকে কিনছেন, তাদের অনেক টাকা আছে। তারা দেখে না। যার জন্য কর্পোরেটরা এই সুবিধা গ্রহণ করে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সেখান থেকে মিল মালিকরাও দাম বাড়ায়। পাইকারী বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা খুচরা বিক্রেতারাও দাম বাড়িয়েছেন তিন থেকে চার টাকা। সর্বস্তরে তারা লোভে পড়েছে। এই লোভের কারণে দাম বাড়িয়ে সমস্যায় ফেলছে সরকার।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মিল মালিকদের বিষয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে এবং নীতিমালা অনুযায়ী নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। রাইস মিলের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন মিল মালিকের তিন থেকে চারটি লাইসেন্স থাকে। তবে এখন থেকে মিলার হিসেবে একজনের লাইসেন্স থাকবে। বাকি ধানের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “চালের বস্তায় বাজরের দাম লিখতে হবে। উৎপাদনের তারিখও লিখতে হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে। নতুন আইন করা হয়েছে। শিগগিরই কার্যকর হবে।” এই আইন কার্যকর হলে মিনিকেট নামক ধান-চাল থাকবে না।বর্তমানে জেলা প্রশাসন যে চালের দাম নির্ধারণ করেছে তা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখতে হবে।এটা কোনোভাবেই বাড়ানো যাবে না।