Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / তারেক জিয়ার সাথে মতের অমিল, নতুন পথে হাটতে চান শীর্ষ নেতারা

তারেক জিয়ার সাথে মতের অমিল, নতুন পথে হাটতে চান শীর্ষ নেতারা

সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির নেতাদের মতের মিল হচ্ছে না। চলমান ধর্মঘট ভেঙে সভা-সমাবেশ বা এ ধরনের কর্মসূচি চান সিনিয়র নেতারা। তবে দলের হাইকমান্ড এ প্রস্তাব আমলে না নিয়ে হরতাল-অবরোধ অব্যাহত রাখার কথা বলছেন। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে চান না। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনের গণসমাবেশে সংঘ”র্ষের পর থেকে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। প্রথম কয়েকদিন এসব কর্মসূচি ঢিলেঢালাভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের শীর্ষ পাঁচ-সাত নেতাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝাটকা বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়।

রাজপথে মিছিলে বিভিন্ন দলের সদস্য, কয়েকটি সহযোগী সংগঠন ও জেলার কয়েকজন নেতাকে দেখা গেছে। এ ছাড়া নেতাকর্মীরা মাঠে আসছেন না। হরতাল-অবরোধ চলাকালে একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থান অন্যদিকে রাজপথে অধিকাংশ নেতাকর্মীর অনুপস্থিতিতে চলমান কর্মসূচি অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ছে। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকলেও আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল। সাধারণ মানুষও জীবন-জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। যে কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি।

এ বিষয়ে ঢাকার সিনিয়র নেতাদের পক্ষ থেকে বৈঠকের কর্মসূচির প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনে মাঠে থাকা নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত করছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক শীর্ষ নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে ঢাকার জ্যেষ্ঠ নেতারা সরকার বিরোধী আন্দোলন করছেন। পুলিশের অনুমতি থাকা সভা-সমাবেশে যেসব নেতাকর্মীর ভিড়ে মঞ্চ ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, পুলিশের অনুমতিবিহীন কর্মসূচিতে সেসব নেতাদের কারও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চলমান আন্দোলনে গত ২৯ জুলাই প্রথমবারের মতো পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই কর্মসূচিতে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারাও সেই দাযিত্ব ঠিকমতো পালন করেননি।’

‘এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সকালে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রক্তাক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের কাছে ‘হিরো’ হলেও বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশ প্রধানের অফিসে খাবার খেয়ে ‘ভিলেন’ বনে যান। মির্জা আব্বাস ঘর থেকে বের হতে পারেননি। নজরুল ইসলাম খান ও ড. আব্দুল মঈন খান তো তাদের নির্ধারিত স্পটেই যাননি।’

নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে নেমে আসতে হবে। চলমান কর্মসূচিতে কোনো নেতাকর্মী নেই। নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দেবেন, গ্রেপ্তার হলে মাঠে নামতে হবে। আমি মনে করি আমাদের সকলের যাদের মামলা আছে তাদের আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করা উচিত।

তিনি বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গা নির্মাণ করে বহুতল আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সিনিয়র দুই নেতা। দলকে গতিশীল করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারলেও এই নেতারা নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের নেতাদের ‘ত্যাগ’ করে নিজেদের ও স্ত্রী-সন্তানদের জন্য আসন নিশ্চিত করতে মরিয়া। আন্দোলন শুরু হওয়ার সময় একজন ব্যক্তি আছেন যার ঠিকানা হাসপাতালে ছিল। মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। কেউ কেউ সরকারের ঘনিষ্ঠ বা দুর্নীতিবাজ।

বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতা বলেন, “সম্প্রতি কেউ নৈশভোজের আয়োজন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। কেউ ‘হানি ট্র্যাপ’ পড়েছেন, নানা কারণে দলের সিনিয়র নেতারা এখন কার্যত বন্ধনীতে রয়েছেন। এসব নেতাকে বাদ দেওয়া যাবে না। চলমান পরিস্থিতি এবং তাদের মতামত দলের হাইকমান্ডের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ নয়।

দলের একাধিক সূত্র জানায়, হরতাল-অবরোধের বাইরে নেতারা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির চিন্তা করছেন। তবে এখনই আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে হরতাল-অবরোধ বাদ দিচ্ছে না বিএনপি। ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন টার্গেট করে তারা শক্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। আপাতত হরতাল-অবরোধের ফাঁকে বিক্ষোভ-সমাবেশজাতীয় কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় বিএনপি।

চলমান আন্দোলনের মাঠে থাকা বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার সময় সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছিল। রাষ্ট্রের সমস্ত অর্গ্যান দিয়েও এক সপ্তাহের বেশি সেভাবে মানুষকে আটকে রাখা যায়নি। মানুষ তার জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বেরিয়েছে। পুলিশও তাদের ঠেকাতে পারেনি। আমাদের চলমান হরতাল-অবরোধেও মানুষ আমাদের এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে। কিন্তু তারা এখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে। কার্যত হরতাল-অবরোধ মানুষ পালন করছে না। এসব কর্মসূচির সমর্থনে নেতাকর্মীরাও মাঠে নামতে পারছে না। ফলে সুপার ফ্লপ কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন দরকার।’

তিনি বলেন, ‘কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে এই মুহূর্তে সাংবিধানিক যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোতে ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে। ঘেরাও কর্মসূচির জন্য বিএনিপর কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে একশ সদস্য বিশিষ্ট একাধিক টিম গঠন করা যেতে পারে। এই টিমে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও থাকবেন। প্রতিদিন একেক টিম একেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করতে যাবে। এসব টিমের কেউ গ্রেফতার হলে পরবর্তীজন টিম লিডার হবেন। এভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া দরকার।’

দলের অধিকাংশ স্থায়ী কমিটির সদস্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখার পক্ষে ছিলেন। এরপর আমরা বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করবো। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়া সব দলকে এক জায়গায় এনে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়- তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে দলের অভ্যন্তরে।- নজরুল ইসলাম খান

চলমান কর্মসূচিতে হতাশা প্রকাশ করে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, নেতা-কর্মীদের কর্মসূচিতে নেমে আসতে হবে। চলমান কর্মসূচিতে কোনো কর্মী নেই। নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দেবেন, যদি তারা থাকেন। গ্রেপ্তার হলে তাদের মাঠে নামতে হবে।

কেন্দ্রীয় সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, “আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতাদের সাথে এই কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এতে তৃণমূল থেকে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সমর্থন রয়েছে।

তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে আমাদের নেতা-কর্মীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না, বাড়ি ছাড়া নেতাকর্মীরা এখনো রাজপথে কর্মসূচি পালন করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। এরপর বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করব। যত দ্রুত সম্ভব সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়া সব দলকে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে চলছে দলের মধ্যে বিশ্লেষণ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবস। একাত্তরে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু আজ আমাদের নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারছেন না। বনে-জঙ্গলে থাকটে হচ্ছে, জেলে মা”রা যাচ্ছে। দুইদিনের মধ্যে অবশ্যই কর্মসূচি পালন করব, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

 

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *