ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে থানায় মারধরের বিষয়ে মুখ খুললেন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন। মঙ্গলবার দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় বু/লিংয়ের শিকার। অনেকেই নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। হারুন স্যারের সঙ্গে আমার বিয়ের কল্পকাহিনী ছড়ানো ছড়ানো হচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে দেখলে যে কেউ বুঝবেন- ওই ছবির নারী আমি না। এর আগেও অনেক ইস্যুতে অনেক লোককে হে/নস্থা করা হয়েছে। এবার আমি এটির শিকার।
সানজিদা আরও বলেন, হাসপাতালে কী ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে পুরো বিষয়টি জানা যাবে। ঘটনার দিন আমার স্বামী হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেননি। আমার স্বামী প্রথমে এডিসি হারুন স্যারকে আ/ক্রমণ করে।
এডিসি হারুনের সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হারুন স্যারের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। তিনি শুধু আমার সহকর্মী। কিন্তু হারুন স্যারের সাহায্য নিয়েছিলাম। সে আমাকে ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে দেই। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।
সানজিদা আরও বলেন, ‘উদ্দেশ্য দেখে মনে হচ্ছিল ওরা আমাদের দুজনকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ভিডিও করতে চাচ্ছিল। পরে তারা এটাকে ব্যবহার করবে, হয়তো কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে।’
এ ঘটনা তার স্বামী পরিকল্পিত কি না জানতে চাইলে সানজিদা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত কি না তা বলতে পারছি না। কিন্তু সে খুব মারমুখী ছিল।
সানজিদা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত এবং ৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সানজিদা বলেন, “কিছুদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলাম। ২০১৯ সাল থেকে হাইপারটেনশনের ওষুধ খাচ্ছি। চার-পাঁচ মাস ধরে সমস্যা বেড়েছে। শনিবার ব্যথা বেড়ে গিয়েছিল।ওই ফ্রি থাকায় ডাক্তার দেখাতে চাই।আমি যে ডাক্তারকে দেখি সে দেশের বাইরে, আমি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের এডিসি হারুন স্যারকে সিরিয়াল করতে বলি।তিনি ওসির মাধ্যমে সিরিয়ালটি সেটি ম্যানেজ করে দেন।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, আমি সন্ধ্যা ৬টায় সেখানে যাওয়ার পর দেখি, যে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে তিনি একটি কনফারেন্সে রয়েছেন। হারুন স্যারকে বিষয়টি জানালে তিনি কাছাকাছি থাকায় হাসপাতালে আসেন।একজন ডাক্তারকে ম্যানেজ করেন। তাকে দেখানোর পর তিনি বেশ কয়েকটি পরীক্ষা দেন।
ঘটনার সময় তিনি ইটিটি রুমে ছিলেন দাবি করে সানজিদা বলেন, “ঘটনার সময় আমি যে কক্ষে ইটিটি করা হয়েছিল সেখানেই ছিলাম। ১৫-২০ মিনিট ইটিটি করার পর আমি বাইরে একটা হৈচৈ শুনতে পেলাম। প্রথম যে আওয়াজটা কানে আসে স্যার (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন, ‘ভাই, আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি আমার গায়ে হাত দিতে পারেন না।”
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ভেবেছিলাম হয়তো অন্য কারো সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর আমার স্বামীকে (আজিজুল হক মামুন) দেখলাম, তিনি আসলে সেখানে কী করছেন, কেন গেলেন তা আমি জানি না। তিনি মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না এবং খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছিল। তার সাথে আরো কিছু ছেলে ছিল, আমি আসলে তাদের চিনি না। তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) ইটিটি রুমে নিয়ে মা/রধর করে।
“‘তারা মূলত স্যারকে (এডিসি হারুন) মারতে মারতে, টেনে-হিঁচড়ে এই রুমে নিয়ে আসে।” স্যার তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইটিটি রুমের এক কোণে দাঁড়িয়েছিলেন,” যোগ করেন সানজিদা।
সানজিদা বলেন, “তখন আমার স্বামী তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, ‘এই ভিডিওটা বানান।’ তারপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও বানাতে লাগলো। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার স্বামী এবং তার সাথে থাকা লোকজনের সাথে চিল্লাচিল্লি শুরু করি। তারপর যারা ভিডিও করছে তাদের মোবাইল ফোন ধরতে চেষ্টা করলে আমার হাতেও তাদের হাত লাগলে একটু ব্যথা পায়। কারণ আমি চাইনি কেউ আমাকে ওই অবস্থায় ভিডিও করুক। তাছাড়া আমার স্বামীর সাথে থাকা ছেলেদের কাউকেও আমি চিনতাম না।”
তিনি আরও বলেন, ‘এমন অবস্থায় আমার স্বামী আমার গায়ে হাত তুলে এবং স্যার বের করে দেবার চেষ্টা করেন। তখন বিষয়টি স্যারের কাছে নিরাপদ মনে হয়নি। তারপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। এরপর হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরাও আসেন। ১০/১৫ মিনিট পর পুলিশ ফোর্স এলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।’
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে নি/র্মমভাবে পিটিয়ে আহত হন ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা। আহতরা হলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।
ভুক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, রমনা থানার এডিসি হারুন অর রশিদ তাদের থানায় নিয়ে গিয়ে মা/রধর করেন। ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়ার পরও হারুনসহ ১০-১৫ জন পুলিশ তাদের মা/রধর করে।