এক সময় যার বিরুদ্ধে অনেক মামলা ছিলো আজ তাকে নিমন্ত্রন করা হয়েছে পদ্মা সেতু উদ্ভদনে। তবে নিমন্ত্রনের বিষয়ে তার (সৈয়দ আবুল হোসেন) সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে না পেয়ে তার এক সহকর্মীর সাথে কথা হয় জাতীয় পত্রীকার এক সাংবাদিকের সাথে। তার ওই সহকর্মীর মুখ থেকেই পওয়া যায় বিভিন্ন সব তথ্য।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও শুভেচ্ছা সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। অতিথিদের আমন্ত্রণে সাড়ে তিন হাজার দাওয়াত কার্ড তৈরি করা হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় রয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার সময় তিনি যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে একাধিক সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
কৌতূহল, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবেন সৈয়দ আবুল হোসেন। রোববার সকাল ১০টার দিকে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। কথা হয় তার ব্যক্তিগত সহকারী সমীর দাসের সঙ্গে। বললেন, ‘স্যার দেশের বাইরে ছিলেন। আজ ফিরছি। ‘
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সাবেক এই মন্ত্রী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর সঙ্গে স্যারের আবেগ জড়িত। এত বড় স্বপ্ন বাস্তবায়নের পেছনেও তার অনেক ভূমিকা রয়েছে। আমরা জানি তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবেন।”
পদ্মা সেতু নির্মাণে নিরলস পরিশ্রম করেছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। সৃজনশীল ও অসম্ভব কাজকে ভালোবাসেন এই মানুষটি ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগের জন্য তাকে অবশ্যই দায়ী করতে হবে। মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। এছাড়াও দলীয় পদ। সৈয়দ আবুল হোসেন ও তার স্বজনরা এখনো মনে করেন, সে সময় তার ওপর অবিচার করা হয়েছিল। যা পরে প্রমাণিত হয়েছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা আলাপচারিতার প্রেক্ষিতে বলেন, সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতি অন্যায়ের কোনো ক্ষতিপূরণ নেই। একজন যোগ্য, দক্ষ, সৃজনশীল ব্যক্তিকে যদি এমন মিথ্যা অভিযোগ স্বীকার করতে হয়, কেউ কি আরও ভাল করার সাহস করবে?
দলে ও সরকারে আবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, সৈয়দ আবুল হোসেন আবার মন্ত্রিত্ব পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তিনি এটা প্রাপ্য হতে পারে.
সৈয়দ আবুল হোসেন প্রায় এক যুগ ধরে নির্জনে রয়েছেন। নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। ব্যবসায় সময় দেওয়া। এমনকি নিজের তৈরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। কাউকে কিছু না জানালেও পদ্মা সেতু নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে দুঃখ লুকিয়ে রেখেছেন তিনি।
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। সারা দেশে এখন শুধু এই আলোচনা, প্রস্তুতি। এ অনুষ্ঠানকে যথাসম্ভব বর্ণাঢ্য করার চেষ্টা চলছে। মন্ত্রী, এমপি, দলের শীর্ষ নেতারাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের বানোয়াট অভিযোগে দেশের স্বার্থে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন সৈয়দ আবুল হোসেন। তবে তিনি বরাবরই বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ অসত্য। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কানাডার আদালতে এক পর্যায়ে সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে প্রমাণিত হয়।
এগারো বছর আগে বিশ্বব্যাংক দেশের মানুষের ‘স্বপ্নের সেতু’কে ঘিরে যে দেয়াল গড়তে চেয়েছিল তা বাস্তবে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সিদ্ধান্তের ফলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক রফিকুল ইসলাম পরামর্শক নিয়োগের বিনিময়ে এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ কমিশন চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিল বিশ্বব্যাংক। প্রকল্প পরামর্শক সংস্থার জন্য বরাদ্দ ছিল 48 মিলিয়ন কোটি ডলার।
একপর্যায়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন চুক্তিও বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি সে সময় এক বিবৃতিতে বলেছিল যে বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সহযোগিতা না করায় তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
সে সময় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের কমিশনার ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তার মতে, বিশ্বব্যাংকের টিম কোনো প্রমাণ না দিয়ে দুদকে এসে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমানসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ দিতে থাকে।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ওই সময়ে বিশ্বব্যাংকের টিম দু’বার দুদকে এসেছিল। তারা বলেছিল আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তারা সেতু প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিতে হবে এবং জোর করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
দুদকের সাবেক এই কমিশনার বলেন, “আমাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যা পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক টিমকে জানানো হয়েছিল। দুদকের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমাদের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির কোনো চিত্র আমরা পাইনি।
২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি দুদক এক সার্কুলারে বলেছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ নেই। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য ও নথির আলোকে তা প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।কানাডার একটি আদালতও পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় সত্যতা না পাওয়ায় সবাইকে খালাস দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুতর বঞ্চিত হন এই জাতীয় যোগাযোগমন্ত্রী।