জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আর ২০ দলীয় জোটে নেই- এমন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন দলটির আমির, যারা পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তার দেওয়া এমন বক্তব্যের ভিডিও। তার বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আরম্ভ হয় নানা ধরনের আলোচনা। ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা দল বিএনপি দলটির আমিরের বক্তব্যের বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
আর জামায়াত নেতারা বলছেন, জোটের ব্যাপারে তারা আগের মতোই অবস্থানে রয়েছেন। নতুন কিছু হয়নি। তবে জোটের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ২০ দলীয় জোট দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। বিএনপি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে চায় জামায়াতের সঙ্গে কোনো সদিচ্ছা নেই। এ কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে আসছে বিএনপি।
টানাপোড়েন সম্পর্কের মধ্যে, দুটি দল একটি সমঝোতায় এসেছে যে তারা জোটবদ্ধ না হলেও একযোগে আন্দোলনে থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের রোববার দেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে দলের আমিরের বক্তব্য ছিল উন্মুক্ত আলোচনা। দলীয় সিদ্ধান্ত নয়।
বিএনপির সঙ্গে জোট আছে নাকি ভেঙে গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি তো বলেনি যে জোট ভেঙে গেছে। আমরা কীভাবে বলি ভেঙে গেছে।’
জোটের বিষয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের একটি বক্তব্য রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, বাসায় ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দল যারা এই জোটের সঙ্গে আছে, বিশেষ করে প্রধান দল (বিএনপি) তাদের এই জোট বাস্তবায়নের কোনো ভাবনা নেই। বিষয়টি আমাদের কাছে দিবালোকের মতো পরিষ্কার এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হলো নিজের অবস্থান থেকে আল্লাহর উপর ভরসা করা। তবে হ্যাঁ, জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব ইনশা আল্লাহ।’
জামায়াতের আমির আরো বলেন, আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করেছি এবং তারা এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।’
এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াত আমিরের বক্তব্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট যৌথভাবে নির্বাচন করে এবং পরে সরকার গঠন করে। সেই সরকারে মন্ত্রী হন জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির এই জোট ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে, বিএনপি ২০ দলের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি পৃথক জোট গঠন করে। এরপর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
এদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামি বছরের শেষ দিকে কিংবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে এমনটি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে জামায়াত বা বিএনপির কোনো কৌশল রয়েছে কিনা হঠাৎ করে জোট থেকে সরে গিয়ে সে বিষয়টিও ভাবছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। তবে কৌশল না হয়ে এটা হতে পারে বিএনপির জোট বিষয়ে শৌথিলতা। কারণ যেহেতু জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে সেহেতু দলটির গুরুত্ব জোটে কমই থাকবে, এটা মনে করছে অনেকে।