নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য করতে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও এই কমিশনকে গ্রহনযোগ্য বলে মেনে নেয়নি বিরোধী দল বিএনপি। শুধু তাই নয় কোনো ধরনের আলোচনার অংগ্রহন করেনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার। কারন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তুলে ধরে যা বললেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হুসেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হুসেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স(এসআইপিজি) এর একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো।২০০৭-১২ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৬৫ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনাল থেকে পিএইচডি। গবেষণা ও লেখালেখির সাথে যুক্ত এম সাখাওয়াত হোসেন ১৯৪৮ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।
সংবাদমাধ্যম : সম্প্রতি আপনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে গাইবান্ধা উপ-নির্বাচন বন্ধের ইসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপে অবিচল থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা পারবেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন: আশা করি পারবেন। তারা অবশ্যই সক্ষম হবে। কারণ তাঁরা সা/পের লেজে পা দি/য়েছেন। এখন সা/প না মা/রলে ছো/বল দেবেই। তাই নির্বাচন কমিশন যে যাত্রা শুরু করেছে, তাতে অবিচল থাকতে হবে। একই সঙ্গে গাইবান্ধায় যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হবে। শাস্তি হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতে যেতে পারেন; আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এখন নির্বাচন কমিশন অভিযুক্তদের শাস্তি না দিলে গাইবান্ধার নির্বাচন বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন শো-অফ করেছে বলার সুযোগ থাকবে।
সংবাদমাধ্যম : গাইবান্ধার বেশির ভাগ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি। এখানে ইসি ও মাঠ প্রশাসনের কি মু/খোমুখি ?
এম সাখাওয়াত হোসেন: নির্বাচন কমিশন কি প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে এ ধরনের লিখিত বক্তব্য চেয়েছে? কমিশন না চাইলে তারা এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে না। ইসি তদন্ত কমিটি করেছে, কমিটি সরেজমিনে কাজ করছে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা কেন কোনো অনিয়ম হয়নি বলে লিখিত বক্তব্য দিতে গেলেন? নির্বাচন কমিশনে দেওয়ার আগে তারা কপি অন্য জায়গায় দেন।
সংবাদমাধ্যম : এই প্রিজাইডিং অফিসাররা কি প্র/ভাবিত হয়েছেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। যেখানে নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে এমন লিখিত বক্তব্য চায়নি, সেখানে তারা প্রভাবিত না হলে তারা কেন গিয়ে বলবে- তাদের কেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হয়নি! সিসিটিভি ক্যামেরায় অনিয়মের প্রমাণ দেখে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
সংবাদমাধ্যম : বুথের সামনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে ভোটারদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
এম সাখাওয়াত হোসেন: তথ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। ভারতেও সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারে কোনো ভুল দেখছি না।
সংবাদমাধ্যম : ডিসি-এসপিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এক কমিশনারের সঙ্গে মৌখিক বাকবিতণ্ডা হয়েছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন: বোঝা গেল আমাদের মাঠ প্রশাসনে যারা কাজ করেন তারা প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করেন। ডিসি-এসপিরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে কাউকে উপেক্ষা করতে চান না। ডিসি-এসপিরা মাঠ প্রশাসনে উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। একজন নির্বাচন কমিশনারের পদমর্যাদা তাদের চেয়ে অনেক উপরে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনাররা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত। এটা ভুলে গেলে চলবে না প্রজাতন্ত্রের কর্মীরা। ডিসি-এসপিরা কমিশনারের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তারা প্রতিবাদ করতে পারে। আমলা হিসেবে তাদের ভালো করে জানা উচিত কীভাবে এবং কী পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করতে হবে। একজন নির্বাচন কমিশনারের কথা বলার সময় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মতো আওয়াজ করা ঠিক হবে কি না, এই প্রশ্নটা তাদের কা/ছেই রাখছি।
সংবাদমাধ্যম : কমিশনারের সঙ্গে ডিসি-এসপিদের আচরণ কি শাস্তিযোগ্য?
এম সাখাওয়াত হোসেন: তারা মনে করেন তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। বেপরোয়া ভাব দেখা/চ্ছেন। তারা নিজেদের বড় কর্তৃপক্ষ মনে করে। যে কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ সম্মান দেননি। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক আশ্রয়ের কারণে।
সংবাদমাধ্যম: গাইবান্ধায় নি/র্বাচন নিয়ে যে প/রিস্থিতি তৈরি হয়েছে, একই দিনে ৩০০ আসনে নি/র্বাচন হলে তা কীভাবে মোকাবেলা করবে ইসি?
এম সাখাওয়াত হোসেন : গাইবান্ধায় যা ঘটেছে তার সুষ্ঠু সমাধান হলে সবাই সতর্ক থাকবে। নির্বাচনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এ জন্য অসঙ্গতি দূর করতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।
সংবাদমাধ্যম : বর্তমান বাস্তবতায় ইভিএমে ভোট দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ইভিএম মেশিন ভালো। কিন্তু এতে কিছু সমস্যা আছে। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য নেই। এ অবস্থায় এটি ব্যবহার করা হলে নানা প্রশ্ন উঠবে। ১০০% কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। ভোটারদের অর্ধেক বাদ দিয়ে এই ব্যবস্থায় না যাওয়াই ভালো। তা ছাড়া দেশের এই অর্থনৈতিক সংকটে ইভিএমে এত টাকা খরচের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সংবাদমাধ্যম : জাতীয় নি/র্বাচন নিয়ে কি শ/ঙ্কা দেখছেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন: হ্যাঁ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় স/হিংসতায় বহু প্রা/ণ গেছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জাতীয় নির্বাচনেও সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখন থেকেই কমিশনকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন ব্যবস্থা স্বচ্ছ করতে কমিশনকে সঠিক পথে এগোতে হবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হুসেন। তিনি বলেন, কমিশন সঠিক ভাবে সিন্ধান্ত নিতে পারলে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব।