দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুই মাস বাকি। ফলে যতই কমে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক মাঠ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি দিচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের দমনে গণগ্রেফতার করছে পুলিশ।
এদিকে, এবারের জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে বিশ্বের অনেক নামকরা দেশ ও সংগঠন সোচ্চার। বিশেষ করে বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত গোলাম মাওলা রনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন তা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
রনি বলেন, বর্তমানে রাজনীতিতে পিটার ডি হাস যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ড্যান মজিনা নামে একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনিও একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তৎপর ছিলেন। তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি।
সে সময় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কার্যক্রম দিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো। সে সময় ওয়াশিংটনের সঙ্গে দিল্লির খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশের যেকোনো ইস্যুতে আমেরিকা দিল্লিকে পরামর্শ দিত।
কারণ ২০১৪ সালে সুজাতা সিং বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। যিনি ভারতের বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন। তার কর্তৃত্ব থাকা সত্ত্বেও, ড্যান মজিনা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। মোটকথা, আজকের পিটার ডি হাসের মতো মজিনাও বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন চেয়েছিলেন।
ওই সময় আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলে। পরে ঘোষণা দেয়, পরে আরেকটি নির্বাচন করব, সেখানে সব বিরোধী দল অংশগ্রহণ করবে। তবে পরে আর আওয়ামী লীগ কথা রাখেনি। কিন্তু ড্যান মজিনা আওয়ামী লীগের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছিলেন। ফলে বিএনপিকে আশ্বাস দিয়ে আন্দোলনও বন্ধ করিয়েছিলেন ড্যান মজিনা।
পরে আওয়ামী লীগ কথা না রাখলে তিনি খুবই বিব্রত ও লজ্জিত হয়ে পড়েন। এরপর কিছুদিন তিনি বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ তুচ্ছতার শিকার হন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাকে ‘শ্রমজীবী মর্জিনা’ বলে সম্বোধনও করেছেন। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কিছুই করতে পারেননি মার্জিনা। বরং নাকে ক্ষত দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল।
এদিকে পিটার ডি হাস গত কয়েক বছর ধরে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ভিসা নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে, আমেরিকা তার শক্তিশালী পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। যথেষ্ট পরিশ্রম করছেন তিনি। বর্তমানে ড্যান মজিনার মতো তিনিও আওয়ামী লীগের কাছে উপেক্ষিত হচ্ছেন। অনেকেই তাকে বিরোধী দলগুলোর ত্রাণকর্তা বলছেন। পিটার ডি হাসের সাথে বিএনপির জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগের লোকজন সহ্য করতে পারে না। আওয়ামী লীগের লোকজন পিটার দে হাসকে ড্যান মজিনার মতো ডাকতে শুরু করেছে।