নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, প্রভাবশালী এই নেতা কোন না কোন ভাবে সব সময় থাকেন আলোচনার শীর্ষে। তিনি যে আর পাঁচটা নেতার মত একজন নেতা তা নয়, একডাকে লাখো মানুষের সমাহার করে দিতে পারেন তিনি। তবে মেয়র আইভীর সাথে তেমন বনিবনা নেই তার। সরাসরি কিছু না বললেও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় একই দলে থাকলেও কাজ করেন সব সময় বিপরীতমুখী। নিজ দলে থেকে দুই বড় নেতা কর্মী যদি নিজেদের ভিতরে দ্বন্দ্ব রাখে তাহলে তো দলের ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক। সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য মিলেছে।
ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পর বিলুপ্ত করা হয় শ্রমিক লীগের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটি। বিলুপ্ত কমিটির নেতারা বেশিরভাগই ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের একজন বিশিষ্ট নেতা একেএম শামীম ওসমানের অনুসারী, যার বিরুদ্ধে পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে নির্দোষ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় মহাসচিব কে এম আজম খসরু সোমবার নিশ্চিত করেছেন, আওয়ামী লীগের নির্দেশে ক্ষমতাসীন দলের মিত্র নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এর কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন: “আপনি একজন সাংবাদিক, আপনি কি বিলুপ্তির কারণ বোঝেন না?” এর বেশি বলতে পারব না।
বহিষ্কৃত কমিটির সভাপতি আলমগীর কবির বকুল শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। এটি আইভির জন্য সক্রিয় হিসাবে দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা হলেই সেখানে তাদের দেখা যায়।
মহাসচিব কামরুল হাসান মুন্না নিজে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। তিনি ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়ে জয়লাভ করেন।তবে নিজের প্রচারেও ব্যস্ত ছিলেন। আইভী সেভাবে ভোট দিতে চাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
মুন্নাকে ফোন করা হলে তিনি তিনটি ফোন পেয়ে প্রশ্ন শুনে কেটে দেন।
বন্দর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয়ের আগের দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা, মহানগর থানা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সব জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগের আরেক অঙ্গসংগঠন।
একক আদেশে ২৬টি কমিটি বিলুপ্ত হলেও এর কোনো কারণ জানানো হয়নি।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা ছিলেন শামীম ওসমানের অনুসারী। তবে জেলা কমিটির চেয়ারপারসন সেলিনা হায়াৎ আইভি খালু থাকলেও কমিটিতে শামীম ওসমানের সমর্থক কম ছিল না। নির্বাচনী প্রচারণায় এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সেভাবে দেখা যায়নি।
নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে গত ৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই দুই নেতাও শামীম ওসমানের অনুসারী ছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় ছাত্রলীগ কমিটির নেতারা আইভীকে সমর্থন করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সেখানে মহানগর কমিটি বিলুপ্তির খবর দেন। পরদিন পুলিশ রিয়াদের বাসায় যায়। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন রিয়াদ। তবে ছাত্রলীগের মূল নেতাদের কেউ মাঠে না নামলেও মহানগর কমিটির আগের নেতাদেরও মাঠে দেখা যায়নি।
তিন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ শহরে আইভী-শামীম দ্বন্দ্ব সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। এই দুই নেতার বাবা-মা যথাক্রমে আলী আহমেদ চুনকা ও আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার মধ্যে বিরোধ চলছে।
২০১১ সালে, আইভি এবং শামীম একে অপরের সাথে লড়াই করেন। শামীমকে এক লাখেরও বেশি ভোটে পরাজিত করে আইভী দলের মধ্যে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর অবস্থান দুর্বল করেছেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।তিনি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে তিনি তার বোনের জয় ছাড়া আর কিছুই চান না।
আবারও একই ঘটনা ঘটার পর শামীম ওসমান আগের মতোই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নৌকার প্রতি সমর্থনের ঘোষণা দেন। তবে প্রার্থী নিয়ে আপত্তি প্রকাশ পায় তার কথায়।
তার বক্তব্য ছিল- ‘নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, শেখ হাসিনার ঘাঁটি। এখানে অন্য কোনো খেলা খেলার চেষ্টা করবেন না। কে প্রার্থী, হু কেয়ার্স? প্রার্থী আমগাছ হোক, আর কলাগাছ হোক। সব সময় নৌকার প্রতি সাপোর্ট।’
নির্বাচনে জয়ী হয়ে আইভী তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকারের বাড়িতে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে আসলেও শামীম ওসমানের বাড়িতে যাননি। শামীম ভোট দিয়ে বলেন, নৌকাকে পরাজিত করা যাবে না। তবে ফলাফল প্রকাশের পর আর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
যদিও নিজ মুখে স্বীকার করেননি শামীম ওসমান, তবে পরিসংখ্যান এটাই বলে। এবারের নির্বাচনে যে শামীম ওসমানের পজিশনটা কিছুটা ঢিলা হয়ে গেছে সেটা সরাসরি বলা না গেলেও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এর অবসান কোথায় কিভাবে সেটা হয়ত এখনও অজানা , তা না হলে এতদিনে হয়তো এই বিভেদ মিটিয়ে ফেলা যেত।