জিপ গাড়ি ব্যবহার করেন ‘প্রাডো’ ব্রান্ডের। গাড়িতে সামনের দিকে গ্লাসে লাগানো রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার। চারদিকে ঘিরে রয়ছে দেহরক্ষী, সবার হাতে দামি ব্রান্ডের ওয়াকি-টকি। রাজধানীর গুলশানের ১ নম্বর সেকশনে আধুনিকভাবে সুসজ্জিত জব্বার টাওয়ার, আর সেই ভবনে তার মাসিক পাঁচ লক্ষ টাকায় ভাড়া করা আলিশান অফিস। কারওয়ান বাজারেও রয়েছে এই আরো একটি অফিস যেটার জৌলূস দেখেই যে কারো মন ছুয়ে যাবে। তার অভিজাত স্টাইলের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে গুলশানে। কাজের জন্য ‘তদবির’ করার পূর্বে এই বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে শুধু সাক্ষাৎ করার জন্যই গুনতে হয় এক লাখ টাকা। এই ব্যক্তির নাম আব্দুল কাদের। আভিজাত্যের সজ্জা এবং রঙে তিনি নিজেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘অতিরিক্ত সচিব’ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে তিনি তার কর্ম সম্পাদন করতেন। এবং এই পরিচয়ের প্রকাশে তিনি এত দিন ধরে চালিয়ে গেছেন ভ’/য়’ঙ্ক/র সব কৌশল, নানা ধরনের চাতুরতা।
অবশেষে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। তাঁকে ধরতে গেল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গুলশানের জব্বার টাওয়ারে অভিযানে নামে গোয়েন্দা পু’/লি’/শের (ডিবি) দল। গ্রে’প্তারের পর সামনে আসছে কাদেরের নানা অপ’কীর্তির চাঞ্চ/ল্যকর কাহিনি। কাদেরচক্রে রয়েছেন অন্তত ৩০ জন ভুয়া সচিব-সা’/ম’/রিক কর্মকর্তা। মাধ্যমিক পরীক্ষার গণ্ডি পেরোতে না পারলেও কাদের আলোচিত ব্যক্তি মুসা বিন শমসের এবং ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রে’প্তার সাবেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন। তাঁর প্র/তা’রণায় বোকা বনেছেন অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিও।
অতিরিক্ত সচিবের নকল পরিচয় দিয়ে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ এনে দেওয়া, সরকারি চাকরিতে ঢোকানো এবং বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হা’তিয়েছেন কাদের।
ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্র’/তা’রক কাদের আগে একবার র্যাবের হাতে গ্রে’প্তার হলেও পরবর্তী সময়ে জা’মিনে ছাড়া পেয়ে বড় পরিসরে ধা’ন্দাবা’জি শুরু করেন। কাদেরের নামে রাজধানীর গুলশান, উত্তরা, মতিঝিল ও শাহ আলী থা’/নায় প্র’তা/রণা, চেক জা’লিয়াতি, পাসপোর্ট জা’লিয়াতি, চু’/রিসহ বিভিন্ন অভিযোগে রয়েছে সাতটি মাম’লা।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন উর রশিদ বলেন, ‘সচিবের ভুয়া পরিচয় দিয়ে সবাইকে বোকা বানিয়েছেন কাদের। জব্বার টাওয়ারের অফিসে মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে কাদেরের বেশ কিছু ছবি আছে। আলোচিত সাহেদের মতোই তাঁর বিরুদ্ধে ভ’/য়ং’ক/র সব প্র’তা/রণার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এমন আরো প্র’তা/রকের তথ্য পেলে আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনব।’
ডিবি সূত্র জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহযোগিতায় গুলশান ডিবি পু’/লি’/শ নজরদারি করে তাঁকে গ্রে’প্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাদেরের ভাষ্য মতে, তাঁর চ’ক্রে আরো ৩০ জন ভুয়া সচিব ও সা’/ম’রিক কর্মকর্তা আছেন। তাঁরা প্রতারণা করে শত কোটি টাকা হা’/তিয়ে নিয়েছেন। কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে সে’/নাবা’হি’/নী পরিচালিত ঝিলমিল প্রকল্প এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের থানচি এলাকার সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করেও প্র’তা/রণা করেছেন তাঁরা। দেহরক্ষী নিয়ে স্টিকার লাগানো গাড়িতে চলাফেরা করলেও কেউ তাঁকে সন্দে’হের চোখে দেখেনি। প্র’তা/রক কাদের ২০১৫ সালে র্যাবের হাতে গ্রে’প্তার হয়ে বেশ কিছুদিন জে’/লহা’/জতে ছিলেন।
ডিবি কর্মকর্তারা এমন ধরনের তথ্যও পেয়েছেন যেখানে তিনি তার অফিসে যেসব মহিলা কর্মরত তাদের দিয়ে ব্ল্যা’কমে’ইলের কাজও করিয়ে নিতেন। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানা গিয়েছে, তিনি কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেন প্রতি মাসে এবং সেই সাথে রয়েছে আয়কর ফাঁ’কি দেওয়ার বিষয়। তিনি তার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্যও দুটি পাসপোর্টও জা’ল করেছিলেন। ডিবির একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেছেন, “কাদের আলোচিত হওয়া সাহেদের মতোই একজন বড় ধরনের প্র’তা/রক, যিনি ক’রোনার চিকিৎসার নাম করে প্র’তা’/রণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছিলেন কোটি কোটি টাকা। তার সম্পর্কে অনেক চাঞ্চ’ল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত করার পর তার এবং তার সহযোগী যারা আছেন তাদের নিকট হতে আরো ধরনের প্র’তা/রণার বিষয় উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’