নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি দাবি করে সাদিক কায়েম নামের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রকাশিত এই পোস্টের মাধ্যমে ১৭ বছর পর ঢাবির শিবির সভাপতির নাম প্রকাশ্যে আসে।
জানা গেছে, সাদিক কাইম নামের ওই ছাত্র ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ১১তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
ঢাবির শিবির সভাপতি পরিচয়ে দেয়া পোস্টে কায়েম বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শোষণ শুধু ছাত্ররাজনীতি নয়, রাজনীতির সংজ্ঞাই পালটে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদে কোনো রাজনীতি থাকে না। বিরাজনীতি ফ্যাসিবাদের ভাষা। ফ্যাসিবাদ ছাড়া সকল বাদ, ইজম ও রাজনীতি ফ্যাসিবাদে অনুপস্থিত থাকে। ফ্যাসিবাদে কোনো রাজনীতি নাই, শুধু ফ্যাসিবাদই আছে। টেন্ডারবাজি, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, ফাঁসি, ধর্ষণ, রাহাজানি, দুর্নীতি এসব রাজনীতি না। এগুলো ফ্যাসিবাদ।’
পোস্টে তিনি চব্বিশের চেতনা নিয়ে আগামী দিনে ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হবে উল্লেখ করে লিখেন, “আওয়ামী ফ্যাসিবাদের গত ১৬ বছরের ভয়ঙ্কর দিনগুলো কিংবা তারও পূর্বের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো রাজনীতির প্রতি তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি করেছিল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। কিন্তু চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সমস্ত ভুল ভেঙে দিয়েছে। রাজনীতি সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন সচেতনতা। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হচ্ছে, ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।”
তিনি আরও লিখেন, ‘ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতিতে মত-দ্বিমত হবে, যুক্তির পাথরে সবাই বিক্ষিপ্ত হবে, কিন্তু কোনো হকিস্টিক কিংবা স্ট্যাম্প থাকবে না। কোনো গেস্টরুম, গণরুম থাকবে না। চব্বিশের আকাঙ্ক্ষাকে বুকে নিয়ে এগিয়ে যাবে এই ছাত্ররাজনীতি। মধুতে ভিন্নমতের কেউ চা খেলে অপর পক্ষের কেউ তেড়ে আসবে না।’
তার মতে, ‘আমরা জানি এই স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছে রাজনৈতিক দলসংশ্লিষ্ট এবং দলের আওতামুক্ত রাজনীতি সচেতন ছাত্র-জনতা। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানোর চেয়ে বড় রাজনীতি, আর কোনো রাজনীতিই না। আমরা চাই সেই রাজনীতির আদর্শে ছাত্ররাজনীতির ব্যাপক ইতিবাচক সংস্কার হবে।’
ছাত্র পরিষদ সক্রিয় করার দাবি জানিয়ে পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘শিক্ষার পরিবেশে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি হবে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে, কিন্তু কেউ যেন স্বৈরশাসক না হয়ে যায় সে বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। এই রাজনৈতিক সংস্কারে চব্বিশের শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে, অন্যথায় আমাদের স্বাধীনতা ধ্বংস হয়ে যাবে।আমরা চাই ছাত্ররাজনীতির সংস্কার গবেষণা, পলিসি ডায়ালগের মধ্যদিয়ে তা বাস্তবায়িত হোক। এ লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পোস্টের শেষে পরিচয় লেখা হয়, ‘সাদিক কায়েম, সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।