Monday , December 16 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ঢাকা সেনানিবাসে বিক্রম মিশ্রি’র গোপন বৈঠক নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে

ঢাকা সেনানিবাসে বিক্রম মিশ্রি’র গোপন বৈঠক নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, আর এই সফর ঘিরে ঢাকায় ও দিল্লিতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তার এই সফর এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বেশি চর্চার বিষয় ছিল ঢাকা সেনানিবাসে তার গোপন বৈঠক। এই বৈঠক নিয়ে বিভিন্ন মহলে কৌতূহল ও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি। তবে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মানবজমিনের (জনতারচোখ) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিক্রম মিশ্রি ঢাকা সেনানিবাসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন।

বিক্রম মিশ্রি তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেন। আনুষ্ঠানিক সফরের অংশ হিসেবে তিনি পররাষ্ট্র সচিবদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে এই সফরের সবচেয়ে রহস্যময় অংশটি ছিল তার সেনানিবাসের ভেতরে বৈঠক, যা পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। বিকেল ৪টার দিকে তার কর্মসূচি শেষ হয়, তবে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ থেকে ৮টা ৩৫ পর্যন্ত তার অবস্থান নিয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য ছিল না। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, ওই সময় তিনি ঢাকা সেনানিবাসে ছিলেন।

ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ঢাকা সেনানিবাসে বিক্রম মিশ্রির এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করা। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে এই বৈঠক ঘিরে দুই দেশের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার নিরসন এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর পরবর্তী ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ভারতের গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করেছিল, যা দুই দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানো হয়। এ ছাড়া ভারতের কিছু রাজনীতিবিদের বক্তব্য ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী প্রেরণের প্রস্তাব বাংলাদেশের মানুষকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।

বিক্রম মিশ্রি এবং সেনাপ্রধানের এই বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের মেঘ কাটানোর বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য কূটনৈতিকভাবে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। বিক্রম মিশ্রি তার সফর শেষে বেশ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ভারত ফিরে গেছেন বলে জানা যায়।

সফরের প্রথম দিন বিক্রম মিশ্রি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে একটি একান্ত বৈঠকে বসেন। সেখানে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের এই সফরে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা তাকে ফেরানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।

বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সেনানিবাসের বৈঠক এবং পুরো সফরকে ঘিরে গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে এমন বৈঠক যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, তা স্পষ্ট।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে এই বৈঠক একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। সম্পর্কের জটিলতা সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

সফরের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অংশগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সেনানিবাসে বিক্রম মিশ্রির রুদ্ধদ্বার বৈঠক দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

About Nasimul Islam

Check Also

এবার ভারতীয়দের ভিসা গণহারে বাতিল করছে আরকটি দেশ

ভারতীয় পর্যটকদের ভিসার আবেদন গণহারে বাতিল করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। নতুন করে চালু হওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *