সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যে ভাবে রাজনীতির নামে নানা রকম অপতৎপরতা চলছে তা সত্যই দুর্ভাগ্যজনক। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্র্রভাব পড়বে।রাজনীতির নামে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে ভাবে আক্রামন করা হচ্ছে শিক্ষার্থীর ওপর তা খুবই দুঃজনক। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া।
আজকে কি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত। তবে আবাসিক সংকটের কারণে এখানে অনেক শিক্ষার্থীরা ভাড়া থাকে। এদের একটা অংশ আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
রোজার মাসে আজ তাদের কয়েকজনের উদ্যোগে ‘প্রোডাক্টিভ রমদান’ নামক ধর্মীয় সভা আয়োজনের কথা ছিল টাওয়ারটির মসজিদে। কিন্তু সেখানকার সমিতি এতে সম্মতি না দিলে তারা টাওয়ার থেকে বের হয়ে যায়।
এসময় মোটরবাইকে করে আসা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের উপর নির্বিচার হামলা করে। এতে আইন বিভাগের ছাত্র রাসেল ও তূর্য সহ কয়েকজন আহত হয়, রাসেলের পুরো চেহারা ভয়াবহভাবে রক্তাক্ত হয়।
এই বর্বরোচিত হামলার কোন বিচার হবে বলে মনে হয়না। বরং এরমধ্যেই ছাত্রলীগের কেউ কেউ বলা শুরু করেছে যে ভিকটিমরা ‘শিবির’ করে। যতোদুর জেনেছি, এটি পুরোপুরি অসত্য বয়ান। তবে এই মিথ্যে ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনকে লঘু বা জায়েজ করার রাজনীতি এদেশে নতুন নয়। গত দশ-বারো বছরে এই রাজনীতির শিকার হয়েছে বিরোধী দলের অনেকেই।
—————–
যাই হোক, ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, দেশের বিচার ব্যবস্থা- আপনাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
১) আক্রান্তরা যদি সত্যি শিবির-এর সদস্যও হতো, তাদের কি ধর্মচর্চার সাংবিধানিক অধিকার নেই? ধর্মীয় মাহফিল করার কারণে তাদেরকে মার খেতে হবে- এটা কি দেশের সংবিধান বা কোন আইনে আছে?
২) কে শিবির করে, কি জঙ্গী সংগঠনের সদস্য ঢালাওভাবে এই অভিযোগ করে মারধোর করার অধিকার কি ছাত্রলীগকে কেউ দিয়েছে? যদি দেয় তাহলে তা কি সম্পূর্ণ বেআইনী নয়?
৩) গত কয়েকবছরে ছাত্র অধিকার, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, বাসদের অনেককেও পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। যাকে খুশী পেটানোর অধিকার দেশের পুলিশেরই নেই, ছাত্রলীগেরও থাকার সম্ভাবনা নেই। তাহলে একের পর এক এসব ফৌজদারী অপরাধের জন্য প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে তাদের কোন বিচার করা হচ্ছে না কেন?
আরেকটা প্রশ্ন সবার জন্য। আমাদের আইন বিভাগের ছেলেগুলোকে কি সত্যিই শিবির ভেবে মারা হয়েছে, নাকি ধর্মচর্চার কারণে? যদি তাই হয় তাহলে এটা কিসের রাজনীতি, এর আসল লক্ষ্য কি?
————-
ভয়কে জয় করে হলেও রাসেলদের মারার প্রতিবাদ আইন বিভাগের সহপাঠীরা করছে। তবে আইন বিভাগ শুধু না, ঢাবির সব ছাত্রদের উচিত এসব হামলার উপযুক্ত প্রতিবাদ করা। সব শিক্ষকদেরও তো আরো বেশী উচিত। তারা কেউ যদি না করে, আমি করবো।
আর কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে ছাত্রলীগ কোনদিন ভিক্টিম হলে তারও প্রতিবাদ করবো একইভাবে।