অধ্যাপক মনজুর আহমেদ চৌধুরী হলেন বাংলাদেশের কীটতত্ত্ব ও প্রাণীবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সম্মানীয় পদে অধিষ্ঠিত হবার পর থেকে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সহিত তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি অধ্যাপক মনজুর আহমেদ চৌধুরী তার এক বক্তব্যে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাতে বললেন।
নর্দমা দিয়ে নদী দূষণের দায়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাতে চান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে যাব, তাদের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও চার লাখ টাকা জরিমানা চাই। রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় ঢাকার চারপাশের নদী দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এ সভার আয়োজন করে।
মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরের মানুষ প্রতিদিন ৫০ লাখ কেজি মল ও ১৫০ কোটি লিটার প্রস্রাব তৈরি করে। তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার, কিন্তু সেগুলো সিটি করপোরেশনের ড্রেন দিয়ে নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে। এ বিষয়ে তাদের বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। অনেক মিটিং হয়েছে। কিন্তু মিটিংয়ে ওয়াসা ও উত্তর সিটি একজন করে জুনিয়র অফিসার পাঠায়। তারা গিয়ে হয়তো মিটিংয়ের সিদ্ধান্তর কথা বলতেও পারে না।
তিনি বলেন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসার ব্যর্থতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওয়াসা পুরাতন পাপী, ওয়াসার নর্দমা শহরকে উল্টে দিয়েছে। নগরীর এসব বর্জ্য নদীতে পড়ছে।
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে খাল পরিদর্শনের উদাহরণ তুলে ধরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদীতে ময়লা যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য খালের মুখে জাল বা বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়। উত্তর সিটি করপোরেশন এখনো তা করেনি। এ জন্য কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে এমন শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদীতে বর্জ্য ফেলার জন্য তো কেউ না কেউ দায়ি হবেন। নদী দূষণের জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনাই নদী কমিশনের দায়িত্ব এবং আর আমি তাই করছি। এটাই নিয়ম, হয়তো তারা জামিন পেয়ে যাবেন। সমস্যা নেই।
তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান তাপসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। বললেন, তাপস সাহেব খালের মাথায় এগুলো করার চেষ্টা করছেন।
খালের দূষিত পানি যাতে নদীতে না পড়ে সেজন্য খালের মুখে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলে জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা একটি বড় পদক্ষেপ।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এর আগেও পটুয়াখালীর মেয়রকে নদীর পাড়ে মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন করেছি। তার অর্ডারে পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ফেলা হতো। এর জন্য তাকেও ছয় মাসের কারাদণ্ড ও চার লাখ টাকার জরিমানা করা হয়েছিল।
ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়ার আগে ওয়াসের এমডি ও উত্তর মেয়রকে কোনো নোটিশ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এই অপরাধের শাস্তি এটাই। এর জন্য কোনো পূর্ব নোটিশের প্রয়োজন নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য কোনো পূর্ব নোটিশের প্রয়োজন নেই। তারা এবার কোথায় বের হলে মোবাইল কোর্ট নিয়ে গিয়ে শাস্তি দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, একজন সিটি মেয়র হলেন নগর পিতা। নগরের সব ধরণের উন্নয়ন একজন মেয়রের উপর নির্ভর করে। একজন সিটি মেয়র হলেন জনগনের প্রতিনিধি, তার কাছ থেকে সাধারণ মানুস অনেক কিছু আশা করে। জনগন টাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে যাতে একজন মেয়র জনগনের পাশে থেকে তাদের সার্বিক উন্নয়নে সর্বদা সাহায্য ও সহযোগিতা করে যায়।