নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো রাজ পথে নামতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ বিপরিত অবস্থান নিয়েছে। আওয়ামীলীগ বলছে সংবিধানের বাহিরে নির্বাচন সম্ভব নয় কিন্তু বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার সমাধান রাজ পথেই হবে বলে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু রাজ পথে বিএনপির আন্দোলন রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুশির ভুমিকা নিয়ে রাজনীতি ভিন্ন আভাস মিলছে।
নির্বাচনের এক বছরের বেশি বাকি থাকলেও এরই মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে রাজপথ। বিএনপি ও তার শরিকরা নানা রকম কর্মসূচি দিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে। মাঠে নেমে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও।
দুই পক্ষ সরাসরি সং/ঘর্ষে না জড়ালেও রাজধানী ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সং/ঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিন ঢাকার বাইরে কোথাও না কোথাও সং/ঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের কথা বলে আসছেন বিএনপি নেতারা। তবে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ, মিছিল-মিটিং করে রাজপথে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে দলটি। সরকার পতনে জোর আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলছেন শীর্ষ নেতারা।
শনিবার বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার তারা কোনোভাবেই হারবেন না, সরকার পতন না করে ঘরে ফিরবেন না। এর আগে তিনি একাধিক বক্তব্যে এমনও বলেছেন, ‘সরকারকে ভাসিয়ে দেয়া হবে।’
রুহুল কবির রিজভী, রুমিন ফারহানাসহ নেতারা বলছেন, ‘খেলা হবে, ফাইনাল খেলা। আওয়ামী লীগ পালিয়েও বাঁচতে পারবে না।’
কথার যু/দ্ধে বসে নেই ক্ষমতাসীন দল। তারা বলছেন, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য-স/হিংসতা হলে জনগণের জানমাল রক্ষায় যা যা করা দরকার তা করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে চাইছে। কিন্তু তা করতে দেওয়া হবে না। নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বাইরে কিছু হলে তা সরকার দমন করবে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের মতোই তৎপর হয়ে উঠেছে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা। দুই দলের নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিছিলে পুলিশের গু/লিতে শাওন নামে এক যুবক নি/হত হন, যিনি যুবদল কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে।
বিএনপির অভিযোগ, সরকারি দলের হা/মলায় এ পর্যন্ত তাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১০০ জনের বেশি।
সম্প্রতি নরসিংদীর মনোহরদী, যশোর, মাগুরা, ভোলা, ফেনী, নোয়াখালী, রাজবাড়ীর গোলন্দ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পুলিশের সঙ্গে সং/ঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও নেতাদের বাড়িতে হা/মলা হয়েছে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভায় বিএনপি কার্যালয়ে হা/মলার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সং/ঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হা/মলার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিনসহ ৯৪ জনের নামে মা/মলা হয়েছে। এতে আরও ৩০০ থেকে ৪০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
প্রতিনিয়ত বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হা/মলা ও মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতারা।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা রাজপথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করবেন। বিএনপি ও এর শরিকদের মাঠের রাজনীতিতে কিছুটা জায়গা দিলেও ক্ষমতাসীনরা তাদের ‘‘বাড়াবাড়ি পর্যায়ে’ যেতে দেবে না।
তারা অভিযোগ করছেন, বিএনপি ষ/ড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের রাজনীতি করছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। যেখানে স/ন্ত্রাস আছে সেখানে প্রতিরোধ ঘোষণার পাশাপাশি বিএনপিকে কোনোভাবেই রাজপথে নামতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে পৃথক দুটি সমাবেশে শোডাউন করে যুবলীগ। সেখান থেকে বিএনপির প্রতিরোধ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাদের এটা করতে দেওয়া হবে না।’
ক্ষমতাসীন নেতাদের বক্তব্যে তাদের কঠোর মনোভাব স্পষ্ট। বিএনপি নেতারাও বলছেন, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। দুই দলের অবস্থান দেশের রাজনীতিকে আরও স/হিংস করে তুলবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
সম্প্রতি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পেটানোই পুলিশের প্রথম কাজ। বিএনপিকে মাঠে নামতে দেবে না। ঢাকায় সবার চোখের সামনে লজ্জা পায় তারা, তাই পেটায় না। কম পেটায়। আর বাইরে (তৃণমূলে) পেটায়।’
জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, দেশে একটি অরাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কাজ করছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না।
প্রসঙ্গত, সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন করছে যা রাজনীতি পরিবেশ আরও ভয়াবহ হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিচ্ছে। তবে এমন পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলছে।