পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি তাঁর সফরের মূল আলোচ্য হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
ইসহাক দারের সম্ভাব্য সফর নিশ্চিত হলে এটি হবে এক দশকেরও বেশি সময় পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর। সর্বশেষ ২০১২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইসহাক দারের এক দিনের সফরের সময় ফেব্রুয়ারির ৫ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে নির্ধারণের আলোচনা চলছে। সফরের বিষয়ে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
৫ আগস্টের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার প্রয়াস চালাচ্ছে পাকিস্তান। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এবং কায়রোর ডি-৮ সম্মেলনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠক এরই উদাহরণ। উভয় বৈঠকে শাহবাজ শরিফ বাংলাদেশ প্রধান উপদেষ্টাকে ইসলামাবাদ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ইসহাক দারের ঢাকা সফর নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এর পাশাপাশি, একটি পাকিস্তানি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল চলতি মাসেই ঢাকায় আসবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, জুন মাসে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে অধ্যাপক ইউনূসের ইসলামাবাদ সফর নিয়েও পাকিস্তান পরিকল্পনা করছে।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, গত পাঁচ মাসে পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু, ভিসা জটিলতা দূরীকরণ, এবং পাকিস্তানের লো কস্ট বিমান সংস্থা ফ্লাই জিন্নাহর বাংলাদেশের ফ্লাইট চালুর অনুমতির অপেক্ষা—সবই এর অংশ।
তবে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান ছাড়া সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ আগ্রহী নয়। অধ্যাপক ইউনূস গত ডিসেম্বরে কায়রোতে শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এসব বিষয় চিরতরে সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ততার চরম পর্যায়ে পৌঁছে। তবু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।