Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার জানা গেল সর্বশেষ পরিণতি

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার জানা গেল সর্বশেষ পরিণতি

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলা হয় ক্ষুদ্রঋণ ধরণার প্রবর্তক। তিনি একাধারে একজন অর্থনীতিবীদ এবং বাংলাদেশী হিসেবে নোভেল পুরষ্কার বিজয়ী একজন ব্যাংকার। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দেশের অনেক মানুষ হয়েছে স্বাবলম্বী। ঋণের টাকা কাজে লাগিয়ে তারা দূর করেছে অভাবকে। সম্প্রতি জানা গেল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে জারি করা রুলের বিষয়ে শুনানির জন্যে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রয়েছে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিতের রায়ের শুনানির জন্য হাইকোর্ট ডকেটে রয়েছে। রোববার (২৪ জুলাই) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সরওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

এর আগে গত ২০ জুলাই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়। এছাড়া দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির বিষয়ে আপিল বিভাগের আদেশও উপস্থাপন করা হয়। ফলে আজ শুনানির জন্য রয়েছে। আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

গত বুধবার (২০ জুলাই) শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মো. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে জারি করা রুল দ্রুত শুনানির জন্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. খুরশীদ আলম খান। বিষয়টি আদালতে উপস্থাপনের আগে তিনি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন।

আইনজীবী মোঃ খুরশীদ আলম খান বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের মামলাটি হাইকোর্টের স্থগিত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টকে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। কিন্তু এখানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে মামলা দায়েরকারী ব্যক্তি রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান। তিনি মারা যাওয়ায় কারখানার পক্ষ থেকে আমাকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

এ কারণে আদালতে আবেদন করার অনুমতি চেয়েছি। আর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। যেহেতু আপিল বিভাগকে দুই মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই আদেশের কপি আমরা আদালতে জমা দিয়েছি। এরপর আদালত বলেন, আপনাকে হলফনামা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় শোনা গেল।

আদালত হলফনামা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এখন মামলার তারিখ নির্ধারণের জন্য উল্লেখিত ফরমে আগামীকাল মামলার তালিকা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জারি করা রুলের শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেন তিনি।

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বাদী হয়েছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন তিনি।

মামলায় শ্রম আইনের ৪ এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় শ্রম কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের স্থায়ী চাকরি না করা, সরকারি ছুটির টাকা নগদ না করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন। এরপর আপিল বিভাগে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওই আবেদনের শুনানি শেষে ১৩ জুন মামলাটি বাতিলের আদেশে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আইন অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের বোনাস না দেওয়ায় এ মামলা করা হয়েছে। পরে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১এ (মামলা বাতিলের আবেদন) ধারায় হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট বিভাগ রুল জারি করে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি হাইকোর্টকে আবেদনের শুনানি করে দুই মাসের মধ্যে রায় দিতে বলেছেন। আর ততদিন পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর বাদী হয়ে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। পরে মামলায় আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন আদালত।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও শাহজাহান। এই তিন আসামি পৃথকভাবে মামলাও করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম দেখুন। সেখানে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিককে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা হয়েছে।

মামলাটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনুস। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ১২ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগ আবেদনের শুনানি করে হাইকোর্টকে দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। আজ একই শুনানির জন্য আবেদন করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূস হলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ ওঠে শ্রমিকদের পাওনা সঠিকভাবে বন্টন না করার জন্য আর সেই বিষয় নিয়ে চলছে মামলা। সেই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে জারি করা রুলের বিষয়ে শুনানির জন্যে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

About Shafique Hasan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *