শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণকালে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বেশ তুমুল বাগ্বিতণ্ডা হয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শন চেকলিস্টে স্বাক্ষরের ভুল নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বিচারক আদালত ত্যাগ করেন। পরে আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করার কথা বললে ড. ইউনূসের আইনজীবী লিখিত আবেদনের জন্য সময় চান। পরে আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলার পরবর্তী জেরার দিন ধার্য করেন।
মঙ্গলবার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এদিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে বিচারক সাংবাদিকদের বের করে দেন।
এ সময় ড. ইউনূসের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘এটা কি ক্যামেরা ট্রায়াল যে সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হলো!’ তিনি বলেন, আপিল বিভাগেও সাংবাদিকরা থাকেন। তাদের সরে যেতে বলা হয় না। তাহলে এখানে কেন?
এ সময় বিচারক বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে বিচার শেষ করতে পারব না আমরা।’
পরে বিচারক সাংবাদিকদের আদালত কক্ষের পেছনে দাঁড়াতে দেন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিনিধিত্ব করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।
শুনানির একপর্যায়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন বাদীকে বলেন, আপনি যখন কোথাও পরিদর্শনে যান, তখন মালিকপক্ষকে জব্দ তালিকা বা চেকলিস্ট দেন। জবাবে পরিদর্শক বলেন চাইলে এক কপি দেই। তখন ইউনূসের আইনজীবী বলেন, এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষকে কি কোনো জব্দ তালিকা বা চেকলিস্ট দিয়েছেন।
জবাবে বলেন, হ্যাঁ দিয়েছি। তখন ইউনূসের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মালিকপক্ষকে দেওয়া চেকলিস্ট আর কোর্টে দেওয়া চেকলিস্টের মিল নেই। এ সময় তিনি আদালতের কাছে এই মামলার বর্তমান বাদীসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আর্জি জানান। জবাবে আদালত লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেন।
এ সময় বাদীর আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সুওমোটো আদেশ দেওয়া যাবে না। তখন ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আমরা আবেদন করব। এরপর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আরেক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সাক্ষীর জেরা শেষ করেন।
জবাবে ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আরও তিন দিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, সবই ধরা পড়ছে। সারা বিশ্ব জানে। এ সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে আদালতের পরিবেশ বজায় রাখার কথা বলেন আদালত। এ সময় হায়দার আলী বলেন, রায়ের পর জালিয়াতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করবেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে বিচারক আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আবারও আদালত বসে। এ সময় আদালত ইউনূসের পক্ষে আবেদন গ্রহণ করে পরবর্তীতে আদেশ জারি করা হবে বলে জানান। পরে সাক্ষীকে জেরা করার জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেছেন যে, ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। আজ আদালতে পেশ করে বলেছি, ওই তালিকার ফটোকপি আমাদের দেওয়া হয়েছে। এখানে একটি মাত্র স্বাক্ষর আছে। আদালতে দায়ের করা তালিকা কারচুপি করা হয়েছে। সেই কপি আমাদের দেওয়া হয়নি। এই চেকলিস্ট নিয়ে ড. ইউনূসকে আসামি করা হয়েছে। আমি বলেছি, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৫ ধারার ১ এর (ঘ) অনুযায়ী প্রধান পরিদর্শকসহ সব পরিদর্শক যারা এ টেম্পারিংয়ে (জালিয়াতি) জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হোক। একজন সাধারণ ব্যবসায়ীর নিরাপত্তা কোথায়? মুহাম্মদ ইউনূসের মতো এত বড় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এটা করা হয়েছে।
গত ২২ আগস্ট ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন সাক্ষ্য দেন কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। তার আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণের পর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এই সাক্ষীর বাবা সেদিন সকালে মা”রা যাওয়ায় বাকি সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি।