ডক্টর ইউনুস বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। যার কারণে তিনি বিশ্বজুড়ে বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিতি পান। তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেও তার বেশ কিছু কর্মকান্ড সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার একটি হল পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে তার নেতিবাচক দিক। যারা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নস্যাৎ করার চেষ্টা করেন তাদের মধ্যে একজন হলেন তিনি। এবার তাকে নিয়ে বেশ কিছু দিক তুলে ধরেছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক-
পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায় ড. ইউনূসকে বিভিন্ন দেশে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। এর কারণ অবশ্য ড. ইউনূসের মানবতা বা সেবামূলক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি নয়, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কারণে সব নোবেল বিজয়ীকে এই ধরনের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি তার নিজ বিষয়, অর্থাৎ অর্থনীতির জন্য নয়, বরং নোবেল পেয়েছেন শান্তির জন্য। যারা শান্তি ব্যতীত অন্য কারণে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তারা বিরল আবিষ্কার বা তাদের কাজের ক্ষেত্রে অবদানের কারণে, যেগুলো মানব জাতির কল্যাণ ত্বরান্বিত করে আসছে। কিন্তু নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নির্বাচনের সময় একটি ব্যতিক্রম ঘটে। এই পুরস্কারটি যে রাজনৈতিক এবং অন্য বিবেচনায় দেওয়া হয়, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। যেই ড. কিসিঞ্জারের হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের তাজা রক্তে রন্জিত, যিনি ইন্দোনেশিয়া, চিলি প্রভৃতি দেশে অগণিত মানুষকে প্রাননাশের নির্দেশ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত, কিন্তু তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ডঃ ইউনূসও সেই সময়ে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা পুষ্ট হয়েই নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন, এটা অনেকেই বলে থাকেন।
এই নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস যে অনেক প্রতার’ণামূলক অপরাধ করে নিজ দেশে নানা অশান্তি সৃষ্টি করছেন তা এখন আমাদের মাননীয় হাইকোর্টের নজরে এসেছে। তিনি তার বহু কর্মচারীর প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ অন্যান্য টাকা আত্মসাৎ করলে উক্ত কর্মচারীরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে একাধিক মামলা ঠুকে দিলে আদালত ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। জনাব ইউনূস অবশ্য আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্তির স্বাদ উপভোগ করতে থাকেন, কিন্তু মামলা চলাকালীন একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। একদিন মেঘ ছাড়া বজ্রপাতের মতো প্রতারি’ত কর্মচারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলীর কথা শোনা গেল। ইউনূসের সঙ্গে বিষয়টি মিমাংসা করে ডা. ইউনূসের বিরুদ্ধে সব মামলা আদালত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরপরও পুরো ঘটনা জানা যায়নি। কিন্তু জানা গেছে যে কর্মচারীদের দ্বারা উল্লিখিত আইনজীবী, যিনি বাংলাদেশের বড় বা সুপরিচিত আইনজীবী নন, শুধুমাত্র ফি হিসাবে মোট ১৬ কোটি টাকা পেয়েছেন। এছাড়া আরও ১০ কোটি টাকার অন্যান্য খরচ দেখিয়েছেন। অন্য কথায়, মোট ২৬ কোটি টাকা তার পকেটে গেছে, যা বিস্ময়ের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
বিষয়টি মাননীয় হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের মাননীয় বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের নজরে এলে তিনি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে উন্মুক্ত আদালতে তার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী নেই যিনি ফি হিসেবে ১৬ কোটি টাকা নিতে পারে। ওই আইনজীবী মাননীয় হাইকোর্টে প্রতিবেদনে ১৬ কোটি টাকা ফি নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। মাননীয় বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের মতামত পাওয়ার পর সবাই ঘটনার গভীরে যান, আরও অনেক জঘন্য ও লজ্জাজনক ঘটনার কথা জানতে পারেন। এগুলো থলের বিড়ালের মতোই বেরিয়ে পড়লো। এটা স্পষ্ট যে ড. ইউনূস এই আইনজীবীকে প্রভাবিত করেছিলেন তার বিরুদ্ধে মামলাগুলি বাদ দেওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা দিয়ে এবং এভাবেই মামলাগুলি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান আদালতকে জানান, তিনি ২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছেন। ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান দেশের একজন স্বনামধন্য ও বিজ্ঞ আইনজ্ঞ। যেখানে তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে ২০ লাখ টাকা পেয়েছেন, সেখানে একজন স্বল্প পরিচিত কর্মচারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী কীভাবে পারিশ্রমিক হিসেবে অবিশ্বাস্যভাবে ১৬ কোটি টাকা পেতে পারেন তা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। এরপর ওই আইনজীবীর সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গত ৪ আগস্ট মাননীয় বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার উন্মুক্ত আদালতে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদকে বদলির অভিযোগের সত্যতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। শ্রম আইন লঙ্ঘন করে ট্রেড ইউনিয়ন এবং আইনজীবীদের ব্যাংকে ‘কর্মচারী অংশগ্রহণ তহবিল’ টাকা। ওই কর্মচারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলেন, তিনি ফি হিসেবে ১৬ কোটি টাকাসহ মোট ২৬ কোটি টাকা পেয়েছেন। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পরই বিচারপতি সরকার উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া ড. ইউনূসের টেলিকম কোম্পানি বিদেশে অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখতেও মাননীয় আদালত বলেছেন এদিকে কোম্পানির ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রচুর অর্থ আত্মসাৎ করে মামলা প্রত্যাহারের অভিযোগ অত্যন্ত কুৎসিত হলেও সে খবর বিশ্বের কাছে অজানাই রয়ে গেছে বিশ্ববাসী জানতে পারলে ড. ইউনূস সাহেবের এমন প্রতারণা ও অসৎ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ভাবমূর্তি শীঘ্রই ভেঙে পড়বে। দুনিয়ার মানুষ জানবে সে আসলে কেমন মানুষ, জানবে সে যে মূর্তিটা বিশ্ববাসীকে দেখাচ্ছেন সেটা আসলেই মেকি। সমস্ত মানুষের জন্য তাদের রঙিন মুখোশ খুলে নেওয়া দরকার। একজন মানুষের পক্ষে তার মিথ্যা ও মেক-বিলিভ ইমেজ দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে বোকা বানানো এবং তাদের কাছ থেকে সম্মান গ্রহণ করা কাম্য হতে পারে না।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার প্রতি মানুষের বিদ্বেষ বাড়বে তার বিরুদ্ধে এটাই প্রথম অভিযোগের পাহাড় নয়। চাকরির বয়স পেরিয়ে গেলেও আইন লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান পদে থাকার অনুমতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তিনি আইন অমান্য করার লোভ ও প্রবৃত্তির প্রমাণ দেন। সরকার তার বেআইনি আবেদনে কান না দেওয়ায় তিনি বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার জন্য প্রভাবিত করেন, যা অবশ্য অভিশাপে পরিণত হয়।
বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করার ঘটনাটিও প্রমাণ করে যে ড. ইউনূসের মধ্যে দেশপ্রেম বলে কিছু নেই। যে ব্যক্তি তার নিজের দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে, বিশ্ব মানবতার জন্য ভূমিকা পালন করবে, এটা সত্য ছাড়া আর কিছুই নয়, তাই তার আসল রূপ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা আশা করি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাস মাননীয় হাইকোর্টের মন্তব্যকে ব্যাপকভাবে প্রচার করবে।
ডাক্তার ইউনুস একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেও তিনি যে সমস্ত কর্মকাণ্ড করেছেন সেটা সমালোচনার যোগ্য। তিনি দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করার চেষ্টা করেছেন এবং সে বিষয়ে কাজ করেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা বড় ধরনের অপরাধ। তবে তিনি কি ধরনের অপরাধ করেছেন সেটা বের করা এবং তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটা এখন সময়ের ব্যাপার।
লেখক: আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি