শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘হয়রানি বন্ধ’ করতে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে বিদেশিদের ধারাবাহিক বিবৃতি তার ইঙ্গিত দেয়।
ইউনূস ইস্যুতে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রভাবশালীরা এত সোচ্চার হলেন কেন?
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের প্রশংসা করে ব্যক্তিগত চিঠি দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একদিন পর অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দেন বিশ্বের ১৬০ জন গুরুত্বপূর্ণ ও সুপরিচিত ব্যক্তি। যেখানে বারাক ওবামাসহ একশর বেশি নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।
শুধু খোলা চিঠিই নয়, একদিন পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ইউনূসের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে সেই খোলা চিঠিতে ড. ইউনূস ইস্যু ছাড়াও আরও দুটি ইস্যু প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলাদেশে আগের দুটি নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে তারা আগামী নির্বাচনেও নজর রাখবেন বলে মনে করিয়ে দেন।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ডঃ ইউনূস একজন বৈশ্বিক সেলিব্রিটি এবং তাই বিশ্বজুড়ে তার অনেক প্রভাবশালী বন্ধু রয়েছে।
‘আমি মনে করি ড. ইউনূস তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সে জন্যই তার প্রভাবশালী বন্ধুদের এক জায়গায় এনেছেন তাদের সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। কারণ তিনি জানেন তার পক্ষে এসব বড় বড় নামের একটি শক্ত প্রভাব আছে। বিশেষ করে চিঠিটি গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় সরকার এখন চাপে পড়েছে।’
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্টের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতা ও সুশাসনের অভাব থাকায় ইউনূস ন্যায়বিচার পাবেন না বলে আন্তর্জাতিক মহলে একটি উদ্বেগ ও ধারণা আছে। এখন তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি তড়িঘড়ি চেষ্টা দৃশ্যমান হওয়ায় তা নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা উদ্বিগ্ন হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তবে ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে অনেকে মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা সরকারের ওপর যে চাপ তৈরি করেছে সেটির জবাব দিতে চায় সরকার। ড. ইউনূস যেহেতু পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, সেটিও তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি ড. ইউনূসের চলমান মামলার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আরও নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আলী রিয়াজ বলেন, ড. ইউনূস ইস্যুতে যে তাড়াহুড়ো করা হয়েছে বা মামলাগুলো যে গতিতে নিষ্পত্তি হচ্ছে তাতেই প্রমাণিত হচ্ছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। এই কারণে আপনি এই সময়ে সেই বিবৃতিতে অন্য কোন উদ্দেশ্য খুঁজে পাবেন না। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও বক্তব্য রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ভিন্নমতের ওপর চাপ বা নি”পীড়ন চলছে। আর আরেকটি বিষয় হচ্ছে তারা আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।
অধ্যাপক ইউনূসের মামলার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে এমনটি উল্লেখ করে আলী রিয়াজ বলেন, ড. ইউনূসের মামলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আর দেশের বাইরে বিচার বিভাগ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই সময়ে কথা বলার এটাই প্রধান কারণ বলে মনে করি।
তবে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলায় সরকারের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।