Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Exclusive / ড. ইউনূসকে ‘হয়রানির’ কারণ হিসেবে আল জাজিরার প্রতিবেদনে তুলে দরলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

ড. ইউনূসকে ‘হয়রানির’ কারণ হিসেবে আল জাজিরার প্রতিবেদনে তুলে দরলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

বিশ্লেষকরা বলছেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষোভের কারণ হতে পারে প্রায় ১৫ বছর আগে তার একটি “কৌশলগত ভুল”। বাংলাদেশের প্রথম নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে ড. ইউনূস ২০০৭ সালে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে তার নিজস্ব রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।

তাকে শীঘ্রই সাধারণ নির্বাচন তদারকি করার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সম্ভাব্য নেতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে তিনি সেই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ (এখনও) এই ধারণায় আটকে আছে যে, পশ্চিমাদের এই সুপরিচিত বন্ধু প্রধানমন্ত্রী পদের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন।

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং দেশটির সবচেয়ে বিশিষ্ট বেসরকারি নাগরিক ড. ইউনূসের মধ্যকার তিক্ত সম্পর্কের কথা সবাই অবগত আছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের ‘হয়রানির’ পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে আল জাজিরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ-বিশ্লেষকের সাথে কথা বলেছে।

ইউএস-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, “অস্থির এক রাজনৈতিক সময়ে বর্ধিত সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে ইউনূসের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে ভুল পথে নিয়ে গেছে। ইউনূস এবং তার সমর্থকরা বলবেন, তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে তৃতীয় একটি পন্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারা বিষয়টি সেভাবে দেখেননি।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশিষ্ট অধ্যাপক আলী রিয়াজ আল জাজিরাকে বলেছেন যে, ড. ইউনূসকে আওয়ামী লীগ সরকারের “অপমান ও মানহানি” নতুন কিছু নয়। এই বার্তা দেওয়ার জন্য এটি করা হচ্ছে যে তার উচ্চতার কেউ যদি নির্যাতিত হতে পারেন, তবে অন্যদেরও নিজেদের ব্যাপারে ভীত হওয়া উচিত।” প্রফেসর রীয়াজ বলছিলেন, ‘ভুল ধারণা থেকে জন্ম নেওয়া ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে’ ইউনূসকে ক্ষমতাসীন দল অপছন্দ করে।

ধরে নেওয়া হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের নেপথ্যে ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা বাংলাদেশের সরকারের কাছে একটি সাধারণ বিষয় এবং কেউ যত বেশি সময় ক্ষমতায় থাকে, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা তত বেশি থাকে সেই দলের।

তবে, শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ আল জাজিরাকে বলেছেন, “”যখনই তিনি (ইউনূস) দেখতে পান যে নিজের মতো কিছু হচ্ছে না, তখনই প্রভাবশালী বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার এই অভ্যাস তার ছিল”। ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের সময় তার পক্ষে মধ্যস্থতা করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে তিনি অনুরোধ করার ফলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যায় বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়।”

আল জাজিরার প্রতিবেদনে র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকাভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান আল জাজিরাকে বলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অভিজাতদের সঙ্গে ইউনূসের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, সেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের পেছনে তার হাত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, হাসিনা ও তার দল বারবার পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের জন্য ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

সাংবাদিক শায়ান এস খান বলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলগুলোর জন্য নির্বাচনের দৌড়ে ‘অশান্ত’ হওয়া স্বাভাবিক। ঢাকায় ইউনূসের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বসাতে চায় আমেরিকা- দেশের গুজবের কারখানাগুলো এমন গল্প ছড়াচ্ছে। নির্বাচনের বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত। এতে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নিজে বিভ্রান্তির মধ্যে থাকায় সরকার সম্ভবত ভিত্তিহীন দাবি দেখতে ব্যর্থ হয়েছে।

About bisso Jit

Check Also

চুলের মুঠি ধরে নারী চিকিৎসককে রোগীর মারধর (ভিডিও সহ)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *