Thursday , November 21 2024
Breaking News
Home / Politics / ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর: মুখোমুখি অবস্থানে এগোচ্ছে সব পক্ষ

ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর: মুখোমুখি অবস্থানে এগোচ্ছে সব পক্ষ

আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ারি, মামলা-হামলা-গ্রেফতারসহ সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাধারণ সভা সফল করার কথা বলছেন দলটির নেতারা। একই দিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জনসভা ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ অবস্থায় ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাহবুব হোসেন। তিনি গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জনজীবন যাতে বিঘ্নিত না হয় সে বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি। জেলাশাসকদেরও এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সাধারণ সভার ঘোষণা দেন। ওই সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

বিএনপির প্রস্তুতি
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চান বলে জানান বিএনপির নেতারা। এ জন্য মহানগরের সমন্বয় কমিটিগুলো জেলায় সমন্বয় করছে। প্রতিটি জেলা থেকে আরও নেতা-কর্মীকে ঢাকায় আনতে দায়িত্বশীল নেতাদের বলা হয়েছে। নেতাকর্মীদের ঢাকায় না আনা পর্যন্ত মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের দ্রুত ঢাকায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে শেষ মুহূর্তে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা হতে পারে, সেই বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। তিনি পরিবহন খাতের সঙ্গে জড়িত থাকলে বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা করতে দলের এমন নেতাদের বলা হয়েছে।

জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর প্রস্তুতি সভা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। পরিবহন জটিলতা এড়াতে নেতাকর্মীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজ উদ্যোগে ঢাকায় যেতে বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকেই ঢাকায় চলে গেছেন। প্রাইভেটকারের বদলে গণপরিবহন নিতে বলেছেন, গ্রেপ্তার এড়াতে ভাড়ায় পরিবহন। একইসঙ্গে আবাসিক হোটেলে না থেকে ঢাকায় গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে।

দলটির নেতারা জানান, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। তারা বলছেন, শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ করতে চান। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে বাধা দিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সম্মেলন-পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, সচিবালয় ঘেরাও ও অবস্থানসহ বেশ কিছু প্রস্তাব রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ করতে চেয়ে ইতিমধ্যেই ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে প্রজ্ঞাপনের চিঠি দিয়েছে বিএনপি। বিকল্প ভেন্যু নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন দলটির নেতারা। নয়াপল্টনে সমাবেশের পরিবর্তে প্রস্তাব করা হয়েছে।

আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির পাশাপাশি রাজধানীতে সমাবেশ করবেন যুগপৎ আন্দোলনের সদস্যরা। গণসংযোগ ও চলমান এক দফা আন্দোলন সফল করতে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছে বিএনপি। এদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি বৈঠক হয়। সভায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাধারণ সভা উপলক্ষে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে গণসমাবেশকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ১৮ অক্টোবর থেকে গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত অন্তত ৬২০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময়ে ৪৯টি মামলায় ১২ হাজার ৯৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি
২৮ অক্টোবরের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, নির্বাচন ঠেকাতে ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচিতে সহিংস আচরণ শুরু করতে পারে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে দমন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সমর্থন করা হবে। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা, জনজীবন ব্যাহত করা, সহিংসতা ও ভাঙচুর কঠোরভাবে দমন করা হবে।ওইদিন শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আয়োজনে। আগামী ২০ অক্টোবর সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপিকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে জনসমাগম করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ দফায় দফায় বৈঠক করছে। এ উপলক্ষে বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব, এটা আমাদের পুরনো ঘোষণায় আছে। বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা আওয়ামী লীগ কীভাবে মোকাবেলা করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময়ই সব বলে দেবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। সকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতারা সতর্ক থাকবেন।

পুলিশের প্রস্তুতি
আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মধ্যবর্তী নেতাদের ওপর আগামী চার থেকে পাঁচ দিন নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন পুলিশ সদস্যদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সমাবেশের চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে গতকাল পুলিশ সদর দফতরে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানা রয়েছে, থানায় মামলা রয়েছে, তাদের সমাবেশের আগেই গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ দিন দেশব্যাপী পুলিশি অভিযান চলবে।

বৈঠকে সমাবেশের অনুমতির বিষয়েও আলোচনা হয়। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সাধারণ সভার জন্য কোন ভেন্যু দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা করছে পুলিশ। তবে অনুমতি দেওয়ার আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কাছে নিজ নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হতে পারে সেখানে অবস্থান ও সক্ষমতা সম্পর্কে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জানাতে বলা হয়েছে। বৈঠক সূত্র আরও জানায়, ৫০ থানার ওসি ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ছাড়া শিগগিরই পুলিশ সদর দফতরের বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাবেশের বিষয়ে আলোচনা করতে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। ওই বৈঠকে পুলিশ বিএনপি নেতাদের তাদের ইচ্ছার কথা জানাবে যে সমাবেশের দিন দলের কর্মীরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণ করবে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) বিপ্লব কুমার সরকার আজকার পত্রিকাকে বলেন, “বিএনপির সমাবেশে আমরা এখনো কোনো নাশকতার আশঙ্কা করছি না। কোনো ভয় দেখি না। ডিএমপি কমিশনার নিরাপদ মনে করলে অনুমতি দেবেন, এবং ঝুঁকি থাকলে তিনি অনুমতি দেবেন না।’

About Zahid Hasan

Check Also

‘আ.লীগ রঙ দেখছে, কিন্তু রঙের ডিব্বা দেখেনি’ দল যে সিদ্ধান্ত নেবে মাথা পেতে নেব

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেছেন, বিএনপি যদি ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়, তাতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *