প্রধান কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। কিন্তু কোর ব্যাঙ্কিং সলিউশনস (সিবিএস) অনুসারে এই হার ২০ শতাংশের উপরে। রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমন অস্বাভাবিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে। শুধু খেলাপিই নয়, ঋণ বিতরণেও রয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম। যদিও এটা খুবই স্বাভাবিক এবং হিসাবের ত্রুটি বলে দাবি করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. নাসিরুজ্জামান।
কৃষি ও কৃষিকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সহজে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১৯৭৭ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ১ হাজার ৩৮টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে কর্মকর্তাদের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে এ ব্যাংক। যার প্রমাণ মেলে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সূচকের হিসাবে।
ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত কর্মচারী বাদে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। কিন্তু সার্বিক ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার কোর ব্যাংকিং সলিউশন (সিবিএস) অনুযায়ী মোট ঋণের পরিমাণ ২৯ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ বিতরণ না করেই বেশি দেখানো হয়েছে ৩৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। তবে, মোট ঋণ বেশি দেখালেও খেলাপি হিসাবে বিপরীত চিত্র। এ ঋণের পরিমাণ প্রকৃত অর্থের চেয়ে ৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা কম দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, শুরুতে আমরা একদমই অ্যানালগ ছিলাম। খাতাপত্রে বা লেজার বইয়ে হাতে লেখে হিসাব-নিকাশ করতাম। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সব হিসাব কম্পিউটারে করা হবে। এরপর আমাদের ব্যাংকাররা হিসাব-নিকাশ দেয়। কিন্তু তাতে বিভ্রাট দেখা যায়। আমার ধারণা, খাতা থেকে ঠিকভাবে সেটা উঠাতে পারেননি তারা। তাই এই গরমিল দেখা যাচ্ছে।
সামগ্রিক ডিজিটালাইজেশনেই কৃষি ব্যাংকের হিসাবের গরমিল ধরা পড়ছে বলে মনে করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ম্যানুয়ালি হিসাব-নিকাশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এতে বিভিন্ন অনিয়ম থাকতে পারে। অটোমেশন হওয়ার পর যেগুলো ধরা পড়ে যায়। আবার কিছু ঋণ বাইরে থেকে যায়। ফলে ডেটা অন্যরকম আসতেই পারে। এখন দেখার বিষয়, এই পার্থক্যে জালিয়াতি থাকে কিনা? দুর্নীতির নির্দেশ দেয় কিনা? তবে অনিয়ম প্রতিরোধে ব্যাংকটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিস্তর নিরীক্ষা প্রয়োজন বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।