আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করার পর সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাদের প্রতি নির্দেশনা দেন। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতিও নির্দেশনা দিবেন। তবে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই নির্বাচন কমিশন অনেক চাপের মুখে পড়ছে নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের জোরালো আপত্তির মুখে পরে তাদের সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্য বন্ধ করতে বাধ্য হন।
গতকাল শনিবার নির্বাচন ভবনে এক মতবিনিময় সভায় আনিছুর রহমান আসন্ন জেলা পরিষদ ও গাইবান্ধা-৫ আসনে বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ডিসি-এসপিদের নপুং”সক ও নখদন্তহীন বলে অভিহিত করেন। একই সঙ্গে ডিসি-এসপিদের অধীনে থাকা ব্যক্তিরাও ইসির কাছ থেকে পাওয়া সুবিধাগুলো যথাযথভাবে পান না বলে অভিযোগ করেছেন। অডিটোরিয়ামে সিইসির সামনে ডিসি-এসপিরা প্রতিবাদে হৈচৈ শুরু শুরু করলে তিনি বক্তৃতা থামিয়ে নিজ আসনে যেতে বাধ্য হন।
বৈঠকে উপস্থিত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, বৈঠকে ডিসি-এসপিদের পক্ষ থেকে জ্বালানি খরচ ও নির্বাহী হাকিমদের ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করলে উষ্মা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘‘আপনাদের বক্তব্য শুনলাম, বেশিরভাগই নির্বাচনে আপনাদের সুবিধার সাথে সম্পর্কিত। তবে সামনে রয়েছে জেলা পরিষদ ও উপনির্বাচন। ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন। ইসির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কই আপনারা তো আইনানুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? আপনারা কি নপুংসক-নখদন্তহীন হয়ে গেছেন?’
আনিছুর রহমান আরও বলেন, “সম্প্রতি আমাদের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো ডিসি-এসপিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন আপনাদের যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, তা অন্যদেরও ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্মানী ভাতা ও ফুয়েল কিনতে টাকা দেওয়া হলেও আপনারা তা দেন না। তার বক্তব্য শুনে ডিসি-এসপিরা একসঙ্গে ‘ঠিক না, ঠিক না’ বলে প্রতিবাদ করেন।
এ অবস্থায় আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। এতে প্রতিবাদ বাড়ে। একপর্যায়ে আনিছুর রহমান বলেন, ‘আপনি কি চান আমি আমার বক্তব্য না দিই?’ ডিসি-এসপি ‘না, না, না’ বলে চিৎকার করলে তিনি বক্তৃতা না দিয়ে ডায়াসে গিয়ে নিজের আসনে বসে পড়েন।
এই ঘটনার পর নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের সাথে সাংবাদিকরা কথা বলার জন্য এগিয়ে যান, কিন্তু সেই সময় আনিসুর রহমান অনেকটা মেজাজ হারান এবং বলেন, আপনারা যে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবেন সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। আমি কিছুই বলি নাই এবং এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। যা বলা হয়েছে সেটা আপনারা জানতে পেরেছেন বা শুনেছেন। এর বাইরে আমি আর কিছুই বলবো না।’ তবে সাংবাদিকরা তাকে আরো বেশ কিছু প্রশ্ন করলেও তিনি একদমই আর কিছু বলেননি।