দেশে ডলারের তীব্র সংকট চলছে। ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা জ্বালানি তেলের দাম দিতে পারছে না সরকার। এই অর্থনৈতিক সংকটে ডলার খরচ করে নেপালের লুম্বিনি শহরে একটি প্যাগোডা তৈরি করতে চায় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এ জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ, বহুসংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে প্যাগোডা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘কনস্ট্রাকশন অব বাংলাদেশ প্যাগোডা অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট কালচারাল কমপ্লেক্স অ্যাট লুম্বিনি কনজারভেটিভ এরিয়া, নেপাল’ নামের প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাততলা বিশিষ্ট এই প্যাগোডা নির্মাণে ব্যয় হবে। বাংলাদেশ ৬৫ কোটি টাকা (৬.৩৭৫ মিলিয়ন)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট।
সূত্র আরও জানায় যে প্রকল্পটি ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার কেনা, পরামর্শ সেবা খাতসহ কয়েকটি খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের পটভূমিতে বলা হয়েছে, লুম্বিনীর বিখ্যাত বাগানে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল। সাইটটি লুম্বিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ আইন ১৯৫৬ দ্বারা সুরক্ষিত। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। সঠিক সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য নেপাল সরকার লুম্বিনি এলাকা লুম্বিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেছে। এটি লুম্বিনি সংরক্ষণ এলাকায় বৌদ্ধ প্যাগোডা/মঠ এবং সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের জন্য নিজস্ব খরচে বিশ্বের বৌদ্ধ দেশগুলির জন্য বিনামূল্যে জমি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ লুম্বিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট, কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রায় 6 একর জমির একটি প্লট প্রদান করে রিজার্ভে একটি বাংলাদেশ প্যাগোডা এবং বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য। প্যাগোডা নির্মাণ বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি গন্তব্য হিসেবে কাজ করবে এবং সেইসাথে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সংস্কৃতিবান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সাত তলা মূল মন্দির ভবন নির্মাণ, তিনতলা সার্ভিস বিল্ডিং ও কমন এরিয়া নির্মাণ, গার্ডরুম ও চেঞ্জ রুম নির্মাণ, বাহ্যিক বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং অফিস সরঞ্জাম, আসবাবপত্র ও আনুষাঙ্গিক ক্রয়।
এদিকে প্রকল্পের পরামর্শক সেবা খাতে দুই কোটি টাকা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এর বাইরে ডিউটি অ্যালাউন্স ও পোস্টিং অ্যালাউন্স খাতগুলো প্রয়োজন না থাকায় তারা বাদ দিতে বলেছে। আর গাড়ি ভাড়া খাতে ৩০ লাখ, টেস্টিং ফি খাতে ৩০ লাখ, সম্মানী খাতে ১৭ লাখ এবং প্রকল্পের আওতায় ১৩টি কম্পিউটার কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়াও, সংস্থাটি বলেছে যে প্রকল্পের উপাদান-ভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন।