Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / National / ডলার পাচার: সিকোটেক্স ফেব্রিক্সের সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশ

ডলার পাচার: সিকোটেক্স ফেব্রিক্সের সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশ

পণ্য পাঠানো হয়নি. কিন্তু তার আগেই গ্রাহকের ডলারে ছাড় দিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা। এ জন্য তিনি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি)ও যাচাই করেননি। এর মাধ্যমে ডলার পাচার হয়েছে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল।

অনিয়মের মাধ্যমে এলসি ডলার ছাড় ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম মোঃ সামছুল আলম বর্তমানে তিনি অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের (এবিএল) ক্রেডিট বিভাগের (লোন শাখা) মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি একই ব্যাংকের ফরেন ট্রেড কর্পোরেট শাখার প্রধান ছিলেন। এ সময় তিনি নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন গ্রাহকের যোগসাজশে অনিয়মে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সিকোটেক্স ফেব্রিক্স লিমিটেডের সঙ্গে এলসি জালিয়াতি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামছুল আলম ২০২০-২১ সালে অগ্রণী ব্যাংকের ফরেন ট্রেড কর্পোরেট শাখায় কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পায়। এতে উল্লেখ করা হয় যে সামসুল আলম পণ্য পাঠানোর আগে লেডিং বিল যাচাই না করে কয়েক লাখ ডলারে রপ্তানি বিল কিনে গ্রাহক সিকোটেক্স ফেব্রিক্সকে অনৈতিক সুবিধা দেন। ওই টাকা রপ্তানি বিল কিনতে ব্যবহার করা হয়নি, অপব্যবহার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শকদের সন্দেহ এই টাকা পাচার হয়েছে।

শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, অগ্রণী ব্যাংকের অডিট কমিটিও সামছুল আলমের বিরুদ্ধে এলসি জালিয়াতির প্রমাণ পায়। এ জন্য গত ৯ নভেম্বর সামছুল আলমকে তলব করেন তারা।

অভিযোগের বিষয়ে গত রোববার সামছুল আলমের সঙ্গে দেখা করা হলে তিনি ডলার পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ডলার ছেড়ে দেওয়া ভুল বলে স্বীকার করেছে এলসি।

সামছুল আলম বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সময় অনেক কিছুই স্বাভাবিক ছিল না। সিকোটেক্স ফেব্রিক্স আমাদের ৩৬
বছর বয়সী গ্রাহক। তার অন্য কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। এ কথা মাথায় রেখেই গ্রাহককে বিশ্বাস করে পণ্য শিপিং না করে রপ্তানি বিল কেনা হয়। এটা করা হয়েছে ব্যাংক ও দেশের স্বার্থে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল ও অগ্রণী ব্যাংকের অডিট কমিটি একে অপরাধ হিসেবে দেখছে। কিন্তু পুরনো ইস্যুটি ব্যাংকের ভেতরের কিছু দুষ্ট লোক তুলে এনেছে। চিঠির জবাবে আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। এখন বিষয়টি কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত সিকোটেক্স ফেব্রিক্স। কোম্পানির সুনাম রয়েছে। কোম্পানিটি ইউরোপীয় দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে।

সিকোটেক্স ফেব্রিক্সের জেনারেল ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘আমরা অগ্রণী ব্যাংকের পুরোনো গ্রাহক। আমাদের পণ্য আমেরিকা এবং ইউরোপ রপ্তানি করা হয়. প্রতি মাসে প্রায় ৫-৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। আর এলসি জালিয়াতির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’

অগ্রণী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সময় সামছুল আলম অলরাউন্ডার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে অনেক আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এখন তিনি আগের এমডির মানহানি করেছেন এবং বর্তমান এমডির প্রিয় এবং এখনও ঋণ বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, আমি ব্যাংকে আমূল পরিবর্তন করতে পেরেছি। আমি গত বছর চলে গিয়েছিলাম। যদি কোনো অসৎ কর্মকর্তা তার অপরাধ লুকানোর জন্য আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে, তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ ধরনের কর্মকর্তারা ব্যাংক, গ্রাহক—সবার জন্যই ক্ষতিকর। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা ব্যাংকের দায়িত্ব।

সামছুল আলমের অপরাধের বিষয়ে জানতে অগ্রণী ব্যাংকে যান বর্তমান এমডি। মুর্শেদুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি দেখা করেননি। পরে মোবাইলে যোগাযোগ করলেও তিনি কল কেটে দেন। খুদেকে পাঠানো মেসেজ দেখেও তিনি সাড়া দেননি।

উল্লেখ্য, চলতি বছর অগ্রণী ব্যাংকের মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর শাখার ব্যবস্থাপক আরকানুল হক এলসি মার্জিনের ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি অন্তত ১৬টি এলসি পণ্যের (৯ কোটি টাকার বেশি) মূল্য পরিশোধ করেননি। অপরদিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অগ্রণী ব্যাংকের বরখাস্তকৃত শাখা ব্যবস্থাপক শৈলেন বিশ্বাসসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা জালিয়াতি করেছেন।

About Zahid Hasan

Check Also

জাহ্নবী কাপুরের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

মন্দিরের সিঁড়ির একপাশে অসংখ্য ভাঙা নারিকেল। তার পাশে থেকে হামাগুড়ি দিয়ে উপরে উঠছেন বলিউড অভিনেত্রী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *