এই বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে, পাকিস্তানের মুদ্রা রুপি, দেশটির ইতিহাসে ডলারের বিপরীতে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। কিন্তু সেখান থেকে দারুণভাবে ফিরে এসেছে পাকিস্তানি রুপি। এএতটাই দারুণভাবে ফিরে এসেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে (চলতি মাসে) বৈশ্বিক মুদ্রাগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি রুপির দামই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এলএসইজি) তথ্য উদ্ধৃত করে বিজনেস ইনসাইডার জানিয়েছে যে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে পাকিস্তানি রুপি ডলারের বিপরীতে 8 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে, ১ ডলারের বিপরীতে ৩০৭ পাকিস্তানি রুপি পরিশোধযোগ্য ছিল। সেই জায়গা থেকে বর্তমানে পরিশোধ করতে হচ্ছে ২৭৫ পাকিস্তানি রুপি।
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাই-ভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের তথ্য বলছে, অবৈধ ডলার লেনদেনের বিরুদ্ধে কঠোর ক্র্যাকডাউনের কারণে পাকিস্তানি রুপির শক্তিশালী পুনরুদ্ধার হয়েছে। দেশটির সরকার সফলভাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করায় ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির দাম বেড়েছে।
এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ বলেছে, “পাকিস্তানি রুপির ভাগ্য ঘুরে গেছে কারণ পাকিস্তান সরকার অবৈধ ডলার বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে।” এছাড়া এ মাসে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপি সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, ‘কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই রুপির দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। বৈশ্বিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা ডলারের নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্রে সুদ হার দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ থাকবে—এমন অনুমানের পর থাই বাথ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়ানসহ বেশির ভাগ মুদ্রারই ডলারের বিপরীতে দাম পড়ে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানি রুপি যা করেছে তা একটি অসাধারণ কীর্তি।
পাকিস্তানের স্থানীয় মিডিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে, মার্কিন বাণিজ্য-কেন্দ্রিক নিউজ আউটলেট সিএনবিসি জানিয়েছে যে পাকিস্তান সরকার ডলারের অবৈধ লেনদেন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, খোলা বাজারে ডলারের অনিয়ন্ত্রিত বিনিময়ের কারণে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার দাম কমছিল। পরে, পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলিতে অভিযান চালায়, নিদের্শনা অমান্য করার জন্য বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জের দোকান বন্ধ করে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। এই প্রচারণার পরপরই বাজারে টাকার চাহিদা ফিরে আসে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স ও অভ্যন্তরীণভাবে বাড়তে থাকায় তা রুপির দাম বাড়ার পক্ষে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
এদিকে, রুপির এই শক্তিশালী অবস্থান বেশিদিন টিকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা নড়বড়ে—দেশটি বিশাল ঋণে জর্জরিত। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন যে পাকিস্তানের জিডিপি ২০২৩ সালে আরও সংকুচিত হবে এবং এটি দেশের হ্রাসপ্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে দীর্ঘায়িত নাও হতে পারে।
এসব ছাড়াও মুদ্রাস্ফীতি পাকিস্তানে একটি বড় সমস্যা। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৩ সালে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ২৯.২ শতাংশ হবে। সরকারী তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র সেপ্টেম্বরেই মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৩১.৪ শতাংশ।