দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় ডলারের বাজারে অস্থিরতা বাড়েই চলেছে। এ অবস্থায় সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের বিনিময় হার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দর বাড়ানো হলে ডলারের প্রবাহ আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা গভর্নরকে বলেছি যে অনেক ব্যাংক বৈদেশিক অর্থ প্রদান করতে পারছে না। এছাড়া ফরেন লোনও কমে আসছে।
দেশের সার্বিক বাজার পরিস্থিতি বোঝার জন্য রোববার বিকেল ৩টায় ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গভর্নর জানতে চান, দেশের বর্তমান ব্যাংকিং খাত কেমন চলছে; কোন কোন এলাকায় সংকট রয়েছে ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের এমডি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের তথ্য ও নানা অনিয়মের কারণে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট ছিল। তবে এখন কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া এই তারল্য সংকট অনেকটাই কমে গেছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে সরকারের ঘাটতি বাজেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ কমিয়ে দেবে । আমি গভর্নরকে বলেছি, সরকারকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা সুদের হারকে (সুদের হার) গুরুত্ব দেব। কারণ আমানত হার বর্তমানে প্রায় ৭/৮ শতাংশ। এই হারে আমানত থাকলে, সরকারকে ৬/৭ শতাংশ রেটে ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন হবে।
বক্তৃতা শোনার পর গভর্নর বলেন, যখন ডলারের বাজার ৮৯ টাকা ছিল, তখনও খোলা বাজারে দর এর চেয়ে বেশি ছিল। ডলার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে এবং বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়, এখনও খোলা বাজারের হারের চেয়ে বেশি।
যারা হুন্ডি বা চোরাচালান করে তারা খোলা বাজারের হার বেশি দেয়। তাই চোরাচালান ও হুন্ডি যে কোনো উপায়ে বন্ধ করতে হবে।
গভর্নর আরও বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দুটি কারণে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেশি, যার কারণে দেশীয় বাজারে চড়া দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।
এ ছাড়া ডলারের মূল্য বাড়লে আমদানি মূল্য আরও বাড়বে। তাই আপাতত ডলারের দাম না বাড়ানোই যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করেন গভর্নর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মাজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, আজকে পাঁচটি ব্যাংকের এমডিদের সাথে বৈঠক হয়েছে; আমরা সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) সিস্টেমে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছি।
তবে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া উচিত নয় বলে পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তার পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার কথা ভাবছে।
এছাড়া দেশে অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জোরদার করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এর আগে, বুধবার গভর্নর ব্যাংক চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে গভর্নর ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কাছে তাদের সহযোগিতা চান যাতে ব্যাংকগুলো ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ডলার ক্রয়-বিক্রয় না করে।