ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন বাজারের চাহিদা বিবেচনায় অল্প অল্প করে বাড়ানোর ঘোষণা ছিল। কিন্তু বুধবার তা কমিয়ে ডলার প্রতি ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয় এবং আমদানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি ও রেমিটেন্সে ১১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী এবিবি এবং ফেডারেশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যাংকের যৌথ সভায় নতুন হারের সিদ্ধান্ত হয়। যদিও নির্দিষ্ট হারে ডলারের লেনদেন হয় না।
এমন এক সময় ডলারের দর কমানো হলো যখন ১২১ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনছে ব্যাংকগুলো। আর খোলাবাজারে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা। মূলত ধারাবাহিকভাবে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বাড়ানোর ফলে দাম আরও বাড়বে– এমন আশায় অনেকেই ডলার ধরে রাখছেন। প্রবাসীদের একটি অংশের মধ্যেও এ প্রবণতা রয়েছে। অনেকে আবার খোলাবাজার থেকে নগদ ডলার কিনে রাখছেন।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরএফ হোসেন সমকালকে বলেন, এখন থেকে প্রতি মাসে ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো হবে না। তিনি বলেন, বৈদেশিক লেনদেনে আর্থিক ঘাটতি এখন বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে এরই মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। বেশিরভাগ ব্যাংকের নেট ওপেন পজিশন (NOP) ইতিবাচক হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে বকেয়া কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের পক্ষ থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নানা উদ্যোগের পরও ডলারের সংকট কমছে না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের সংগঠন বাফেডা গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর নির্ধারণ করছে। প্রাথমিকভাবে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের জন্য ডলার ক্রয়ের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৯ টাকা এবং ১০৮ টাকা। পরবর্তী সময়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কেনার দর অভিন্ন করা হয়। যদিও বেশির ভাগ ব্যাংক নির্ধারিত দরে ডলার না পেয়ে বেশি দিয়ে কিনছে।
করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক অর্থ পাচারের কারণে হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত যে ডলারের রেট ৮৫ টাকা ছিল তা এই পর্যায়ে এসেছে। আবার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে যা এখন ১৯.৬০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে (আইএমএফের হিসাব ব্যবস্থা অনুযায়ী)।
এটি মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রির কারণে। চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। গত অর্থবছরে বিক্রি ছিল ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।