চলমান তীব্র ডলার সংকটের মধ্যে সরকার ও ব্যাংকিং খাত নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ব্যয় বেড়েছে। উল্টো আয় বাড়েনি বরং কমেছে। ব্যয়ের তুলনায় আয় না বাড়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে সরকার। অন্যদিকে সরকার ট্রেজারি বিল, বন্ড ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তাই মুদ্রাস্ফীতি রোধে সুদের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ফেব্রুয়ারিতে ঋণের সুদের হার ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে ভোক্তা ঋণে সুদের হার হবে সাড়ে ১৩ শতাংশের কাছাকাছি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার আগে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল।
সে সময়ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব হয়নি। 2020 সালের মার্চ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এর কারণে দীর্ঘ লকডাউন ছিল। সে সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। এ কারণে রাজস্ব আদায়ও কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং নন-এনবিআর খাতের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। সংগ্রহ হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। সংগ্রহ হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল। ঘাটতি মেটানো হয়েছে ব্যয় কমিয়ে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আহরণে সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ১ শতাংশ। তখন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। সংগ্রহ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ১৬ হাজার কোটি টাকা।
রাজস্ব ঘাটতি হলে সরকার টাকা ধার করে। কিন্তু এখন সরকারের ঋণের দরজা সংকুচিত হয়েছে। এ কারণে তারা আগের মতো ঋণ পাচ্ছেন না। ফলে সরকারের অর্থ সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে।
ডলার সংকটের কারণে তারল্য সংকট বেড়েছে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত প্রবাহ কমেছে। এতে সরকারকে বড় ধরনের ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ সংকট বাড়বে। এতে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ কমিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াও সরকারের অন্যতম উৎস। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণের কারণে ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ হার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বন্ধ রয়েছে।
সরকার আগে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বিপুল ঋণ নিলেও এখন আর নিতে পারছে না। এতে উচ্চ সুদের হার রয়েছে এবং আইএমএফ খাত থেকে ঋণ কমাতে বলেছে। ফলে গত অর্থবছরে এ খাত থেকে নতুন নিট ঋণ নিতে পারেনি সরকার। উল্টো অন্য খাত থেকে ঋণ নিয়ে সঞ্চয়পত্রের ঋণ পরিশোধ করেছে। এসব মিলিয়ে সব খাত থেকে সরকারের ঋণ সংকুচিত হয়েছে। বন্ড মার্কেট থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা এখনো গড়ে ওঠেনি। এ বাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ এখনো বাড়েনি। ফলে টাকা ধার করে রাজস্ব ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না।
একই সঙ্গে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ যেমন কমেছে, অনুদানও কমেছে। ফলে বৈদেশিক খাতে অর্থের প্রবাহ কমেছে। অর্থ সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। ডলার সংকটের কারণে, সরকার 2022 সালের মাঝামাঝি থেকে বিদেশী তহবিল প্রয়োজন এমন প্রকল্পগুলি পিছিয়ে দিয়েছে। এখন ঋণের সংকটও অনেক প্রকল্পের কাজ কমিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, সরকার রুপির পাশাপাশি ডলারে ব্যয় করার নীতি অনুসরণ করছে।
এদিকে ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ ব্যাহত হচ্ছে। একই কারণে সরকারি খাতের আমদানিও ব্যাহত হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় অংশ