বাংলাদেশের ঢাকাই সিনেমার বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ। তিনি ২০১০ সালে “জাগো” সিনেমার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সিনেমা অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন। এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত সিনেমা গুলো দর্শক মাঝে ব্যপক সাড়া ফেলেছে। এবং তিনি তার অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে দর্শক মনে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি তিনি তার অভিনীত নতুন একটি সিনেমা প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা জানালেন।
‘মুখে বড় বড় কথা বলার থেকে, আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক মানের বুলি না আওড়িয়ে একবারে করে দেখালাম আন্তর্জাতিকের মানেটা আসলে কি। সেটা সংজ্ঞাসহ উদাহরণসহ। আমাদের দর্শক দেখুক আমাদের পরিসরে আমরা কতটা করতে পেরেছি, আমাদের কি আছে ,আর কি নেই।’ বৃহস্পতিবার ‘মিশন এক্সটিম’ ছবির প্রিমিয়ার শো’এর আগে গণমাধ্যকর্মীদের কাছে নিজের ছবি নিয়ে আত্মবিশ্বাস এভাবেই প্রকাশ করছিলেন আরিফিন শুভ। শুভ মনে করেন মিথ্যা কথা আর ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে দর্শকদের হলে আনার দিন শেষ। এখন যা করার করে দেখিয়েই দর্শকদের হলে টানতে হবে। নায়কের ভাষ্য, ‘১৫ বছর আগের আর আজকের পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সবার জানাশোনা। তাই মুখে বড় বড় কথা বলে আর ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে দর্শকদের হলে আনার দিন চলে গেছে। এখন কিছু করে দেখিয়ে তাদের হল টানতে হবে। আমি মিশন এক্সট্রিমে কিছু করে দেখানোর চেষ্টাটাই করেছি।’
শুক্রবার বাংলাদেশের ৫০টি হল ও বিশ্বের ৫টি দেশে একযুগে মুক্তি পেয়েছে ‘মিশন এক্সট্রিম’। ধাপে ধাপে যোগ হবে আরও প্রায় ৮ থেকে ১০টি দেশ। ছবিটি মুক্তির আগের অনুভূতি জানতে চাইলে শুভ জানান তার স্ট্রাগলের গল্প। বলেন, ‘অনুভূতিটা আসলে মিশ্র। আমি আসলে যেখানেই কাজ করি, যতটা কাজ করি তাতে আমার দিক থেকে অনেস্টি ব্যাপারটা থাকে। পকেট ভরার জন্য অসংখ্য কাজ করার চাইতে দু একটা ভালো কাজের চেষ্টা করি। পকেট ভারির করার ওইসব অসংখ্য কাজে ইন্ডাষ্ট্রির কোনো লাভ হয় না। দু একটা ভালো কাজেই ইন্ডাষ্ট্রির অনেক উপকার হয়। আমি মিশন এক্সট্রিমের বেলায় সে ত্যাগটা করেছি।’ ছবিটিতে নাভিদ শাহরিয়ারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভ। এই চরিত্রটিতে ফুটিয়ে তুলতে তাকে ছাড় দিতে হয়েছে অনেক। টানা দুই বছর অন্য কোনো ছবি করেননি। মাসলম্যান হতে হয়েছে। বডি বানাতে গিয়ে অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
শুভ বলেন, হ্যাঁ, পকেট ভারির করার অনেক সিনেমা করতে পারতাম। কিন্তু সেগুলো না করে একটা ভালো সিনেমা করেছি। মিশন একস্ট্রিমের বেলায় এই ত্যাগটা আমি মন থেকেই করেছি। এই সেকরিফাইসটা না করলে কি মিশন এক্সট্রিম হতে না? হতো। কিন্তু আমি ছবিটি অনেস্টি দিয়েই করতে চেয়েছি। আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক শুধু মুখে বলার চেয়ে একবার করে দেখালাম। ছবিটি চারটি মহাদেশে রিলিজ হয়েছে। এটা কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে এবারই প্রথম। ওই চারটি মহাদেশে বাংলা ভাষাভাষি যারা আছেন তারা ছবিটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এটা অনেক বড় একটা বিষয় আমাদের জন্য। যোগ করে বলেন ঢাকা অ্যাটাকের এ নায়ক। খালি কলসি বাজে বেশি প্রবাদে বিশ্বাসী শুভ। তাই ছবিটি নিয়ে বেশি কথা বলার পক্ষে নন তিনি। কলসি যা বাজানোর দর্শকরাই ছবিটি দেখার পর বাজাবেন বলে বিশ্বাস তার। শুভ বলেন, ‘আমাদের ডিরেক্টর ও রাইটার ফয়সাল আহমেদ ও সানী সাওয়ারকে ঢাকা অ্যা/টা/কের বেলায়ও আপনারা ভালোবাসা দিয়েছেন। আমরা দর্শকদের ঠকাইনি, তাদের মিথ্যে কথা বলে হলে আনার চেষ্টা করিনি। কথায় আছে খালি কলসি বাজে বেশি। আমি আজকে বেশি বাজাতে চাই না। তাহলে খালি মনে হবে। মিশন এক্সটিম ছবিটি দেখার পর কলসি দর্শকরা বাজাবে।’
এদিকে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নিয়ে নির্মিত ছবিতে ‘বঙ্গবন্ধু’র ভূমিকায় অভিনয় করছেন শুভ। ছবিটির শুটিং থেকেই শুটিংয়ের পোষাকে প্রিমিয়ারে হাজির হন এ নায়ক। শুভ জানালেন, মিশন এক্সট্রিমে যে শুভকে দেখতে পাবেন এখন আরে সেই সিক্স প্যাকওয়ালা শুভ নেই। চরিত্রের জন্য এখন বেশ মোটা হতে হয়েছে তাকে। শুভ বলেন, ‘মিশন এক্সট্রিম ছবি করার সময় আমার ওজন ছিলো ৮২ কেজি, এখন হয়েছি ৯৫ কেজি। এখন সিক্স প্যাক আমার জন্য অতীত।’ তবে আবার সুযোগ এলেন চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে গঠন করে নিবেন বলেও দৃঢ়তার সঙ্গেই জানালেন আরিফিন শুভ।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বিনোদন মাধ্যম এক সংকটময় পরিস্তিতির মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। এমনকি ক্রমশই দেশের সিনেমা হল গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভাল মানের সিনেমার অভাবে এমন পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে নতুন প্রজন্মের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক এই বিনোদন মাধ্যম দর্শক নন্দিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ ভাবে কাজ করছে। সরকারও এই খাতে নানা ভাবে সাজায্যে-সহযোগিতা করছে।