অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কে আমানবাজার থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে খন্দকিয়া গ্রাম। এই গ্রাম এখন সম্প্রতি এক মর্মান্তিক দুর্ঘটার কারনে পুরো এলাকা স্তব্দ হয়ে গেছে। ১১ যুবক চিরতরে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি এলাকার মানুষ যেন মেনে নিতে পারছে না। প্রয়াতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। সবার মুখে শোকের ছায়া।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামের ‘আরএন্ডজে’ কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৬ জন মাইক্রোবাসে করে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার সময় বারতাকিয়া স্টেশন এলাকায় রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ১১ জন প্রয়াত হয়েছেন। এই ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় নেট দুনিয়ায় (সোশ্যাল মিডিয়া ফেস// বুক)। সেই ভিডিওতে দেখা যায় ১৬ জনের একটি দল আনন্দ ভ্রমণে যাচ্ছে। এ সময় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি উচ্চস্বরে গান বাজছিল। সেই গানের সঙ্গে গাইছিল তরুণ-তরুণীরা। পরে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় প্রয়াত ১১ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ভিডিও দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালে প্রচার করা হয়।
এদিকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর ১৬ যুবকের মধ্যে একজন স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন। ততক্ষণে ভিডিওটি দেশ-বিদেশের নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে যুবকদের বিভিন্ন দিক থেকে ফোন আসতে থাকে। ফলে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে বলে ভাইরাল ভিডিওতে হাটহাজারী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের (প্রবীণ) শিক্ষার্থী মো. সারোয়ার হোসেন। সোমবার বিকেলে ওই শিক্ষার্থী জানান, গত ২৪ জুলাই সকালে উপজেলার ধলাই ইউনিয়নের ঘাটা এলাকা থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ১৬ জন শিক্ষার্থী মাইক্রোবাসে করে বাঁশখালীর চা বাগান ও ইকোপার্কে আনন্দ ভ্রমণে যায়। ফেরার পথে তাদের সঙ্গে ছিলেন কাতিরহাট মাদ্রাসার ১ম বর্ষের ছাত্র আলিম। সাজ্জাত তার TikTok
আইডিতে ‘ব্যাচেলর ট্যুর জা হ্যায়’ স্ট্যাটাস দিয়ে ভিডিওটি আপলোড করেছেন।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে মহানগর প্রভাতী ট্রেনের ধাক্কায় মারা যাওয়ার পর মাইক্রোবাসে গোসল করে ফেরার পথে বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় আরএন্ডজে কোচিং সেন্টারের ১১ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের প্রয়াত হয়। মিরসরাই খৈয়াছড়া বসন্ত, আমাদের এই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছে। ভাইরাল হয়ে যায়। পরে, দেশের অনেক টিভি চ্যানেল এবং অনলাইন পোর্টালগুলিও এই ভিডিওটি ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার করে। সেখানে বলা হয়, মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখে ফেরার পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় আমরা প্রয়াত হই। এতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়েছে। কারণ আমাদের অনেকের বাবা বিদেশে থাকেন। এ খবর দেখে তারা খুবই বিরক্ত হন এবং আমাদের ও দেশে থাকা আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করেন বিষয়টি জানতে। এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সোশ্যাল মিডিয়ার বহুমাত্রিক ব্যবহার এবং মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা সম্পাদনার গবেষণা ও শিক্ষাদানকারী সহকারী অধ্যাপক রাজীব নন্দী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো বিষয়বস্তু বিশ্বাস করা উচিত নয়।
প্রদত্ত তথ্য (সংবাদ, ছবি, ভিডিও) সত্য, যৌক্তিক এবং এর মূল উৎস কিনা তা ক্রস চেক করা প্রয়োজন। কারণ, প্রযুক্তিগতভাবে এখন সমাজে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়াচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইক, কমেন্টের সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য এই কন্টেন্ট তৈরি করা এবং এর সাথে আগ্রহ অর্জন করা খুবই সহজ। এই সরল মনের বিশ্বাসীদের সাময়িক অস্বস্তি এবং বিব্রত সম্মুখীন। তিনি আরও বলেন, যে কেউ কোনো বিষয়বস্তু পোস্ট বা শেয়ার করেন, তাকেও যথাযথ দায়িত্ব ও সম্পূর্ণ নিশ্চিততার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য (ডাটা) শেয়ার করতে হবে। চোবি শিক্ষক রাজীব নন্দী বিশ্বাস করেন যে মিডিয়া সচেতনতা, দেশের প্রচলিত আইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য প্রদানকারী এবং গ্রহণকারী উভয়ের সাধারণ জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত হওয়া জরুরী ভুয়ো তথ্যের বিস্তার বন্ধ করতে।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন শুক্রবার বিকেলে মিরসরাই বড়তাকিয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী প্রয়াত হন। এতে অন্তত পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতরা সবাই আর এন্ড জে কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও শিক্ষক। তাদের সবার বাড়ি খন্দকিয়া গ্রামে। তারা মিরসরাইয়ে ঝরনা দেখতে যাচ্ছিলেন। অপরদিনে ঘটনার দিনই আরো এক দল শিক্ষার্থীর আনন্দ ভিডিওকে কেন্দ করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পরে, যা ভুক্তভোগীদের পরিবারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেন।