বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে গেছে আবারো একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ট্রেন ক্রসিং এর সময়ে মাইক্রোবাসের সাথে ধাক্কা লাগে ট্রেনের। আর এই ঘটনায় এক সাথে ঝড়ে যায় তাজা ১১ টি প্রাণ। আর সেই থেকেই এই ঘটনা নিয়ে সবখানে হচ্ছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। সকলেই এ নিয়ে দুষছেন রেলের অব্যবস্থাপনাকে।
বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গত ৩১ মাসে লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনায় ২১৯ জন নিহত হয়েছে এবং তাদের জরিপে দেখা গেছে, রেলক্রসিংয়ে সিগন্যাল ম্যান না থাকা, সিগন্যাল না দেওয়া বা সিগন্যাল না মানার কারণে এসব মৃত্যু হয়েছে। .
লেভেল ক্রসিংয়ে মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? এমন প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, দায়িত্ব আমাদের নয়, যে পাস করবে সে দেখে-শুনে পার করবে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দায় তাকেই নিতে হবে কারণ ৯০% লেভেল ক্রসিং অবৈধ আমরা এগুলো করিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে এগুলো তৈরি করেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ২,৯৫৬ কিলোমিটার রেলপথে ২,৭৯৮টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা এক হাজার ৪৬৮টি, বাকি ১,৩২১টি লেভেল ক্রসিংয়ের কোনো অনুমোদন নেই। রেলপথ মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের ৫০% এলজিইডি, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এবং সড়ক ও মহাসড়ক দ্বারা নির্মিত। অধিদপ্তর, বাকি কাজ স্থানীয় লোকজন করে।
তবে রেলের মহাপরিচালক বলেছেন যে আসলে তাদের ৯০% অবৈধ ১,৫০০টি লেভেল ক্রসিংয়ের ৬০-৭০ শতাংশ বৈধ বলা হয় অন্যরা তৈরি করেছে, আমাদের দ্বারা নয়। আমরা পরে বাধ্য হয়ে দায়িত্ব নিয়েছি
এই হলো লেভেল ক্রসিং এর বাস্তব চিত্র আর সে কারণেই লেভেল ক্রসিংগুলো সত্যিই মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে এই লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তার দায় কেউ নেয় না তাই বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংয়ে লেখা আছে, “আপনি দায়ী থাকবেন। দুর্ঘটনা,” বলেন মহাপরিচালক
রেলওয়ের দখলে থাকা ১,৪৬৮টি লেভেল ক্রসিংয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে ১,৫৯০ জন গেটম্যান কাজ করছেন। ফলে শিফটিং ডিউটি করার সুযোগ নেই, কিছু বড় লেভেল ক্রসিংয়ে ১০ জন গেটম্যানও রয়েছে। কোনো ধরনের গেটম্যান ছাড়াই বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৯৬১।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ২৮ জুলাই, ২০২২ সাল পর্যন্ত সারাদেশে লেভেল ক্রসিংয়ে ১১৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ২১৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০২০ সালে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৬৯ জন নিহত হয়েছেন। ২০২১ সালে ৪৩ টি দুর্ঘটনা এবং এই বছরের ২৯ জুলাই পর্যন্ত ৩৫ টি দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত হয়েছে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হওয়ার পর লেভেল ক্রসিং নিয়ে আবারও আলোচনা হচ্ছে দুই গেটম্যানের আট ঘণ্টা লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে ২৪ ঘণ্টার বাকি আট ঘণ্টা কোনো গেটম্যান নেই এবং টেলিফোনও ভাঙা, সিগন্যাল লাইট নেই সেখানে লেখা আছে, ‘দেখা শুনে সরে যান’। দুর্ঘটনার জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন।’
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, আসলে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে নৈরাজ্য চলছে এর জন্য কেউ দায়ী নয় এবং সেখানে যারা গেটম্যান আছে তাদেরও কোনো প্রশিক্ষণ নেই তাদের নিয়োগ সাময়িক ফলে পেশাদার গেটম্যান নেই। গেটগুলো পুরানো পদ্ধতিতে চলে দু-একজনের পক্ষে গেট সামলানো সম্ভব নয় কিন্তু যারা যাবে তাদেরও সচেতন হতে হবে।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চার সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাদিউজ্জামান বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি বাংলাদেশে সব লেভেল ক্রসিং স্বয়ংক্রিয় করতে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা লাগে। অটো সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে গত ১০ বছরে রেলের পেছনে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে এত টাকা রেলের পেছনে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচাতে কিছুই করা হচ্ছে না বিশ্বের রেলওয়ে যেখানে অনেক দূর এগিয়ে আসুন, আমরা এখনও প্রাচীন পদ্ধতিতে চলছি
রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারের দাবি, লেভেল ক্রসিং এভাবে তৈরি হলে আমরা কেন দায় নেব? আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে বলেছি থানায় মামলা করেছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী কেউ সরাসরি লেভেল পার হতে পারে না পাসের নিচে বা ওভার পাস।
তিনি আরও বলেন, রেললাইনের দুই পাশে সর্বদা ১০ ফুট পর্যন্ত ১৪৪ ধারা রয়েছে, কিন্তু তাও মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে দোকান বসছে, দুর্ঘটনাও বাড়ছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই অনেক বছর ধরেই। বিশেষ করে রেলের নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার কারনে শুরু থেকেই মানুষের অভিযোগ রয়েছে রেল নিয়ে। তবে এ নিয়ে তেমন কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি রেল কৃর্তপক্ষের দ্বাড়া,