নেত্রকোনা সদরের বাসা থেকে পরিবারের সদস্য ও স্বজনসহ ৯ জন ঢাকায় ফিরছিলেন। সোমবার রাতে তারা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ওঠেন। তাদের মধ্যে ৫ জন বিমানবন্দর স্টেশনে নামলেন। তারপর ট্রেন চলতে শুরু করলে হঠাৎ রুম ধোঁয়ায় ভরে যায় এবং চিৎকার শুরু হয়। তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেন থামানোর জন্য তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়লাম সবাই। মাত্র চারজন দুর্ভাগা নামতে পারেননি।
তাদের মধ্যে ছিলেন নাদিরা আক্তার পপি ও তার তিন বছরের ছেলে ইয়াসিন। আগুনে তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। পপি শেষ অবধি শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আর এভাবেই শেষ হয়ে যায় মা ও সন্তানের জীবন।
পপির দেবর মিনহাজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “ছোট ইয়াসিন ভাবীর কোলে ছিল। তিনি শিশুটিকে নিয়ে নিচে নামতে পারেননি। আগুন নেভানোর পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশুটির মৃতদেহ তখনো তার কোলে। দুজনে একসাথে পুড়ে মারা গেল।
মিনহাজুর আরও জানান, তার ভাই মিজানুর রহমান কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়্যারের জিনিসপত্রের ব্যবসা করেন। দোকানের নাম- রহমান এন্টারপ্রাইজ। তিনি রাজধানীর তেজতুরী বাজার এলাকায় থাকেন। পপি ও তাদের দুই সন্তান তার সঙ্গে থাকত।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) অন্য স্বজনের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন তারা। সবাই ছিলেন ‘জ’ কোচের যাত্রী। তাদের মধ্যে পপির বড় ছেলে মাহিন (৯) ও ভাই হাবিব ট্রেন থেকে নামতে সক্ষম হয়। পরে তারা দেখতে পায় পপি ও ইয়াসিন নিখোঁজ রয়েছে। তবে ততক্ষণে ট্রেনের বগিতে আগুন ধরে যায়। আর কোন উপায় ছিল না। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর পর চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে দুইজন পপি ও তার শিশুপুত্র ইয়াসিন।
তিনি বলেন, ‘লাশ দেখে বোঝা যায়, শেষমুহূর্ত পর্যন্ত সন্তানকে বুকে আগলে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ভাবি। তবে অনেক লোকের হুড়োহুড়ির মধ্যে বের হতে পারেননি। সন্তানকে বুকে নিয়েই জীবন্ত পুড়ে মারা যান।’ আগুনের ছোবলে সন্তানসহ ই প্রাণনাশ হলো পপির।