জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করে বড় হয়েছেন সাইদুজ্জামান। এমনও হয়েছে, কোনো দিন দুবেলা-আবার কোনো দিন একবেলা খেয়েও দিন কেটেছে তার। দীর্ঘদিন এভাবে যাওয়ার পর একপর্যায়ে পরিবার-পরিজনদের সহযোগিতায় নিজের পায়ে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি, পাড়ি জমান সুদূর মালেশিয়ায়। আর্থিকভাবে সচ্ছলতার জন্য দীর্ঘ ১০ বছর দেশের বাইরে থাকেন তিনি। কয়েক বছর আগে দেশে আসেন সাইদুজ্জামান। নিজের জমানো টাকা আর ব্যাংকঋণ নিয়ে কেনেন একটি ট্রাক। প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি জমা দিয়েও ভালোই চলছিল তার সংসার। প্রতিদিনের মতো ট্রাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাল নিয়ে যেতেন তার ড্রাইভার। গতকাল বুধবার বেনাপোল থেকে সুতা লোড দিয়ে ঢাকায় আসছিলেন তার গাড়িচালক শহিদুল। হঠাৎ শহিদুল সকাল ১০টার দিকে ফোন করে তাকে জানান, পদ্মা পাড়ি দেওয়ার সময় পাটুরিয়া ঘাটে ট্রাক বহনকারী আমানত শাহ ফেরি ডুবে গেছে। ফেরির সঙ্গে তার গাড়িটিও পদ্মায় তলিয়ে গেছে। খবর পেয়েই সাইদুজ্জামানের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
সাইদুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয় পাটুরিয়া পাঁচ নম্বর ফেরিঘাটে। তিনি বিমর্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন ডুবে যাওয়া ফেরির দিকে। আর অপেক্ষায় রয়েছেন কখন তার ট্রাকটি ওপরে তুলে আনবেন উদ্ধারকর্মীরা। আক্ষেপের সুরে বলতে থাকেন, এ পর্যন্ত ছয়টি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু আমার ট্রাকটি কোথায় আছে তা-ও জানতে পারিনি। ট্রাকের আয় দিয়েই সংসার আর ব্যাংক লোন দিতাম। এখন কী করব, কোথায় যাব! আমার আর কিছুই রইল না। যদি ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়ও তাহলেও অনেক টাকা ডেমারেজ লাগবে।
অভিযোগের সুরে তিনি আরো বলেন, দুই দিন ধরে ফেরি ডুবলেও উদ্ধারকর্মীরা তার ট্রাকটি কোথায় আছে তা শনাক্ত করতে পারেননি। যে ট্রাকগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তা আবার নদীর পাড়ে নদীর পানির মধ্যে রাখা হচ্ছে। এতে ক্ষতি আরো বাড়বে বলেও তিনি জানান। সরকারের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করেন তিনি।
ট্রাকচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের গাড়িটি ঢাকা (মেট্রো-ট-২২৩০৮৮) নম্বর ছিল। ফেরি ডুবে গাড়িটি তলিয়ে যাওয়ায় তার মালিকের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পরিবার নিয়ে কিভাবে চলবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
সাইদুজ্জামানের মতো কথা হয় আরেক ট্রাক মালিক শোয়েবের সঙ্গে। তিনিও জমি মর্টগেজ রেখে ঋণ করে একটি ট্রাক কিনেছিলেন। তারও এখন পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। শোয়েব বলেন, যারা অনেক গাড়ির মালিক, তারা হয়তো ঘুরে দাঁড়াবেন। কিন্তু আমারা যারা ঋণ করে গাড়ি কিনেছি, তাদের অবস্থা কী হবে? তাই সরকার যেন আমাদের সহায়তা করে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার ১৭ টি ট্রাক ও ৩ টি মাইক্রবাসসহ বেশকিছু মোটরসাইকেল নিয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যায় আমানত শাহ নামের একটি রো রো ফেরি। এতে রীতিমতো হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে গাড়ির মালিকেরা। অন্যদিকে এ ঘটনার পর থেকেই উদ্ধার অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানা গেছে।