রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব দেশের সেবা করা আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা মানুষের সুবিধা অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখা ইত্যাদি। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। যেখানে দেখা গেছে সরকারি সেতুর টোল চাওয়ায় টোলের এক কর্মচারীকে বেধড়ক পিটুনি দিলেন ছাত্রলীগ। যে ঘটনার একটি ভিডিও সম্প্রতি সারাদেশে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের সৈয়দ মাস উদ রুমি সেতুর টোলের টাকা দাবিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কর্মচারীদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে সেতুর পশ্চিম প্রান্তের টোল প্লাজায় এ ঘটনা ঘটে।
ছাত্রলীগের হামলার পর সেতু শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া দেয়। এতে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আহত হন। তাদের অন্তত তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সামনে মুজিব চ্যাটারে জানাজা সভার আয়োজন করে জেলা ছাত্রলীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। বেলা ১১টার দিকে কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে রওনা হন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া টোল প্লাজার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা সৈয়দ মাস উদ রুমি সেতুর পশ্চিম প্রান্তের টোল প্লাজায় বিএলএর মোটরসাইকেল বহরকে থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা মোটরসাইকেল থেকে নেমে টোল প্লাজার এক কর্মচারীকে ঘুষি মারতে থাকেন। অন্য কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের আরও নেতারা এসে তাদের মারধর শুরু করেন।
টোল প্লাজার কর্মচারীদের অভিযোগ, টোলের টাকার দাবিতে ছাত্রলীগ নেতারা মোটরসাইকেল থামিয়ে এক কর্মচারীকে মারধর শুরু করে। তাদের বাধা দিতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অন্য কর্মীদের মারধর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় সেতুর টোল প্লাজায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমারখালী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জানাজায় যেতে দেরি হওয়ায় সবাই দ্রুত টোল প্লাজা দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এ সময় টোল প্লাজার কর্মীরা থেমে যান। ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়ার পর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে কটূক্তি করেন। এতে ছাত্রলীগের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে কর্মচারীরা পেছন থেকে ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আহত হয়। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতে এ বিষয়ে বৈঠক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
কী কারণে সংঘর্ষ হয়েছে তা তিনি জানেন না উল্লেখ করে সেতুর ইজারাদার পারভেজ আনোয়ার ওরফে তনু বলেন, একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ফুটেজ দেখে বিস্তারিত জানা যাবে। আহত হয়েছেন কয়েকজন কর্মচারী। আমি এখনই কিছু বলতে চাই না।
জানতে চাইলে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সেতুর টোল প্লাজায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অনেক নেটিজেন। নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। এ ঘটনায় এখনো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের পরে অন্যায় কারি দের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ওই এলাকার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ওসি কামরুজ্জামান।