দুই তিন দিন ধরে একটি সংবাদ বারবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। যেই সংবাদে লক্ষ করা যায় একটি মেয়ে তার মাকে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। একপর্যায়ে তার মায়ের মত শাড়ি এবং অন্যান্য অলংকার একটি মৃ’ত লাশের গায়ে দেখে নিজের মা বলে দাবি করে বসে। নিজের মৃ’ত মাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে থাকে সে। তবে হঠাৎই তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে তার মাকে কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। যে ঘটনায় নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনার মহেশ্বর পাশা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমকে (৫২) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। প্রায় ২৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার পর দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ দুই দিন আগে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে দাবি করেন, তার মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এমন দাবির দুদিন পর তাকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনা অনেক রহস্য ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
শনিবার গভীর রাতে খুলনার দৌলতপুর থানায় এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি রহিমা বেগম ফরিদপুরে আছেন। পরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের নির্দেশে আমাদের কয়েকজন দক্ষ কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
রহিমার অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি জানিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে রহিমা বেগম তার সব ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে রেখেছিলেন। আমরা তাকে মোটেও ট্র্যাক করতে পারিনি। তিনি যে বাড়ির দুই নারীর সঙ্গে বসে কথা বলছিলেন। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে উদ্ধার করা হলেও আমাদের অফিসাররা তাকে উদ্ধার করার পর কোনো কথার সাড়া দেননি, তারপর থেকে তিনি নির্বাক।
পুলিশ জানায়, খুলনায় রহিমাদের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকা কুদ্দুস মোল্লার ফরিদপুরের বাড়িটি দখল করা হয়। কুদ্দুস খুলনা শহরের পাটকলের শ্রমিক ছিলেন। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে রহিমার ছেলে মিরাজ একবার কুদ্দুসের বোয়ালমারীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। রহিমাদের সঙ্গে কুদ্দুসের তেমন সম্পর্ক ছিল না।
কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তিনজনকে আটকের বিষয়ে কেএমপি কর্মকর্তা মোল্লা জাহাঙ্গীর বলেন, “আমরা ওই বাড়ি থেকে তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছি। তারা হলেন কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী, ছেলে এবং তার (কুদ্দুস) ভাইয়ের স্ত্রী। আমি এই তিনজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে। ১৭ আগস্ট রহিমা বেগম ওই বাড়িতে যান।প্রথমে তারা রহিমাকে চিনতে পারেননি।পরে একপর্যায়ে তিনি তাকে চিনতে পারেন।পরে তিনি সাবেক জমিদার (কুদ্দুস ও তার বাড়ির লোকজন) হিসেবে ভালোভাবে দেখাশোনা করেন। (রহিমা) তাদের জানান, আগে সে গোপালগঞ্জের মকছেদপুর ও চট্টগ্রামে ছিল।
উদ্ধার হওয়া রহিমাকে প্রাথমিকভাবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হবে। সেখান থেকে তাকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হবে নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনে।
এ ঘটনার পর অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে হারিয়ে রহিমার মেয়েকে। তবে এ ঘটনার মূল প্রশ্ন হচ্ছে কেন রহিমা বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিল এবং সংবাদমাধ্যমে এত বার্তার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেও কেন তিনি বাড়ি ফেরেননি? এসকল বিষয় নিয়ে প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছে অনেকের মনে। তবে এ সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়নি রহিমা । তাকে উদ্ধার করার পর থেকেই কারো সাথে কোনো কথা বলেননি তিনি।