Wednesday , November 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / টাকা পাচারকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করায় তদন্ত কমিটির উপর ক্ষোভ ঝাড়লেন বিজিএমইএ

টাকা পাচারকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করায় তদন্ত কমিটির উপর ক্ষোভ ঝাড়লেন বিজিএমইএ

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে দশটি কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকা পাচার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের জন্য গণমাধ্যম এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ ও নিন্দা জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বিষয়টিকে ‘মিথ্যা ও ভুল তথ্য’ বলে দাবি করেছেন। লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, পোশাক শিল্প যখন জাতীয়, অর্থনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রেখে এগিয়ে যাচ্ছে, কেউ আমাদের থামাতে পারবে না, তখন আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছি।  জারি করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

আর দেশের প্রধান দৈনিকগুলো ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচার’, ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ১০টি কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকা পাচার’ ইত্যাদি বিভিন্ন শিরোনামে তা ছেপেছে। কার স্বার্থে এই ধরনের চিঠি, মিডিয়া প্রকাশ, মিডিয়া প্রচারণা, আসলে করা হয় – এটি আমাদের জন্য একটি বড় প্রশ্ন। আমরা অনুভব করি যে এটি আমাদের অর্থনীতি, শিল্প, দেশ বা সরকার কাউকেই কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে নিচ্ছে না। শুধুমাত্র বাধাগ্রস্তই করছে।।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা এখনো তদন্ত করা হয়নি; তাদের নিয়ে সমগ্র শিল্পখাতকে ঘিরে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা তাদের ডেকে আনবে, তদন্ত করবে এবং যারা সত্যিকার অর্থে কোনো ধরনের অসাধু কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনবে- এটাই প্রথা হওয়া উচিত এবং এটা সর্বত্রই আছে।

উল্লিখিত বিষয়টি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরে আমরা এটিকে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করার চেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান করছি।

সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, অভিযোগ পাওয়া ১০টি কারখানার মধ্যে ৪টি বিজিএমইএ এবং দুটি বিকেএমইএ সদস্য প্রতিষ্ঠান। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজিএমইএ, বিকেএমইএর কোনো অধিভুক্তি নেই। বিজিএমইএর ৪টি সদস্য কোম্পানি হলো- ফ্যাশন ট্রেড, প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড এবং হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড। বিকেএমইএর দুটি সদস্য কোম্পানি হচ্ছে পিক্সি নিটওয়্যার লিমিটেড এবং ইডেন স্টাইল-টেক্স (বায়িং হাউস)। আমরা আমাদের সদস্য কারখানাগুলোকে তদন্তের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছি। তারা লিখিত বক্তব্য দেন।

আমি আবারও বলছি, কেউ অভিযুক্ত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সঠিকভাবে তদন্ত করে, প্রমাণ করে, তারপর তাদের বিচারের মুখোমুখি করবে। মিডিয়াতে আপনার এই ইস্যুটির ঢালাওভাবে মিডিয়ায় দেওয়ায় সামগ্রিকভাবে শিল্পটি হেয় হয়েছে। যেখানে আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের সেক্টরের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার জন্য এত কিছু করছি- সেখানে এমন বিবেকহীন পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়িত স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা বাঞ্ছনীয়।

আজ আমরা এই শিল্পের দশজন উদ্যোক্তা সম্পর্কে কথা বলছি, তাদের মধ্যে হাজার হাজার উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা গভীরভাবে হতাশ এবং আঘাতপ্রাপ্ত। উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কারণ, এই অভিযোগ তাদেরও স্পর্শ করছে। যেখানে এদেশের মেহনতি সরকার ও উদ্যোক্তারা এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সেখানে আমরা বিনীতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই কেন এমন ঘটনা ঘটল। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছি। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত বিজিএমইএ।

ফারুক হাসান বলেন, আমি বিনীতভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছি পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখছে। গত ১০ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩২০ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার হিসাবে প্রায় ২৬ লাখ কোটি টাকা। আর গত পাঁচ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু আমরা এই টাকা রপ্তানি করে আমাদের দেশের মধ্যে নিয়ে এসেছি এবং এই যে রপ্তানিটা আমরা করতে পেরেছি, এটা কিন্তু সহজ কাজ ছিল না। এর জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। এর জন্য আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এ জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করতে হয়েছে।

আজ আমাদের পোশাক শিল্প ৪৭ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে। শুধু বিলিয়ন ডলার নয়, পাঁচ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এর সাথে সম্পর্কিত আমাদের বৃহত্তর অর্থনীতিতে অন্যান্য সমস্ত লেনদেন।  এই বিষয়গুলো সব সময় গভীরভাবে দেখা হয় না। আমরা বিশ্বাস করি যে এই শিল্পের মাধ্যমে যে পুঁজি তৈরি হচ্ছে তা আরও অনেক সম্ভাবনাময় শিল্পের সুযোগ তৈরি করছে।

সেখানে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নাম আসার কথা থাকলেও তাদের নাম আসেনি বলে জানান তিনি। এটা আমাদের পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা। এ ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা তদন্ত করে দেখব, যদি প্রমাণিত হয় যে এই সংস্থাগুলি জড়িত নয়, তবে যারা এই চিঠি পাঠিয়েছেন আশা করি সংশোধন করবেন।

যেসব কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেসব কারখানায় ক্রয়াদেশ কমে গেছে।। শ্রমিক অসন্তোষ থাকলে যারা এসব ছড়িয়েছে তাদের দায় নিতে হবে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠনের দাবি জানাই। এ জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

About Nasimul Islam

Check Also

ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে ‘আয়নাঘর’ নিয়ে মুখ খুললেন জিয়াউল আহসান

জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ আট কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *