Saturday , December 28 2024
Breaking News
Home / Countrywide / টাকার শোকে তালাবন্ধ ব্যাংকের গেটে কাঁদছেন গ্রাহকরা

টাকার শোকে তালাবন্ধ ব্যাংকের গেটে কাঁদছেন গ্রাহকরা

ইউসুফ মিয়া নরসিংদীর মহেশপুর ইউনিয়নের আলগী বাজারের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ১০ লাখ টাকা এবং মোট সাড়ে ১২ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত রাখেন।

তবে ওই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন তার অফিস তালা দিয়ে তার টাকা ও শত শত গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান।

গত রোববার (২১ জানুয়ারি) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ইউসুফসহ ভুক্তভোগীরা হারানো টাকা ফেরত পেতে বারবার এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসে আসছেন। শেষ সঞ্চয় হারিয়ে কাঁদছেন অনেকেই।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আলগী বাজারে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসে ভিকটিম ইউসুফ (৬৫)কে পাওয়া যায়। ব্যাংকের গেটে ঝুলন্ত তালা ধরে কাঁদছিলেন তিনি। সেথানে সাংবাদিকদের দেখে কেঁদে ফেলেন তিনি।

ইউসুফ মিয়া বলেন, আমার ছেলের বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা চাষ করে বাঁচিয়েছি। নিরাপদ ভেবে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করি। তার অ্যাকাউন্টে আরও আড়াই লাখ টাকা ছিল। আমার কাছে মোট 12.5 লাখ টাকা আছে। আমি ব্যাংকে আসি এবং মালিককে খুঁজে পাই না, আমি ব্যাংকে কোন লোক খুঁজে পাই না। তারা আমার টাকা নিয়ে ব্যাংক বন্ধ করে ভয় পেয়ে যায়। আমি কিভাবে আমার কষ্টার্জিত টাকা পেতে পারি?

মহেশপুর ইউনিয়নের আলগী বাখরনগর গ্রামের স্বদেশ দাস নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আমি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। আমি তিন বছরের জন্য ব্যাংকে আমার অ্যাকাউন্টে দুই লাখ টাকা রেখেছি। এখন টাকার মেয়াদ এক বছর পাঁচ মাস। লোকমুখে শুনেছি ব্যাংকের মালিক ব্যাংক ডাকাতি করে পালিয়ে গেছে। পরে সত্যতা যাচাই করতে ব্যাংকে এলে ব্যাংকটি বন্ধ ছিল। এ ঘটনা শুনে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরপর মঙ্গলবার আমি নরসিংদী ডাচ-বাংলা ব্যাংক অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলে। পরে বুধবার নরসিংদী কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।

আলগী বাজারের টিন ব্যবসায়ী কালাম মিয়া বলেন, এই ব্যাংকটি ২০১৬ সাল থেকে চলছে। ব্যাংকটি অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত ছিল। আমাদের এলাকায় যারা মাঠে কাজ করত তারা এই ব্যাংকে টাকা রাখত। তারা ততটা স্বাধীন ছিল না। সচেতনতার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে লিটন গ্রামের মানুষকে প্রতারণা করে আসছে শহিদুল ইসলাম। প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এখানকার গরিব মানুষ লিটনকে দেখে টাকা দেয়নি, বরং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আস্থার নাম শুনে এখানে টাকা রাখে। এখন আমরা প্রধানমন্ত্রী ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী করছি যত দ্রুত সম্ভব প্রতারককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দরিদ্র-দুঃখী মানুষের জমাকৃত টাকা গ্রাহকদের কাছে ফেরত দিতে হবে।

এ বিষয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক নরসিংদী শাখার রকেট অ্যান্ড এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসের ইনচার্জ অলিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে পার্শ্ববর্তী ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখা সব কথা শোনে বলে জানান তিনি। পরে তিনি সেখানে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের (আরএম) পদে কর্মরত তৌহিদ নামের এক ব্যক্তির ফোন নম্বর দেন। তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ফোন কেটে দেন।

এদিকে আলগী বাজার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার পর ওই এলাকার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম (৪৫) বিষ পান করে আত্মহত্যা করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চাপে আব্দুল কাইয়ুম আত্মহত্যা করেছেন বলে পরিবারের অভিযোগ।

অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আলগী বাজার শাখার উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটনের বাড়ি একই উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে। ঘটনার পর থেকে সে এখনও পলাতক রয়েছে।

About Zahid Hasan

Check Also

নথিপত্র গায়েব হচ্ছে সন্দেহে তুলকালাম কাণ্ড, দুইটি ট্রাক আটক

বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়নে পুরোনো নথিপত্র গায়েব হওয়ার সন্দেহে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সচিবালয়ে নথিপত্র পুড়িয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *