বর্তমান সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জ্বালানি তেলের দামের বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বড় ধরনের একটি ইস্যু পেয়েছে। আর এই বড় ধরনের ইস্যু কাজে লাগাতে চাইছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু এই সময়ে আন্দোলনে যাওয়া ঠিক হবে কিনা সে বিষয় নিয়ে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতের ভিন্নতা। যার কারণে এই ভিন্নমত নিয়ে বিএনপির একটি অংশ আন্দোলনে নামছে, তবে বিএনপির কয়েকজন নেতা বলছেন ভিন্ন কথা।
হরতালের মতো কর্মসূচির পক্ষে-বিপক্ষে দলের শীর্ষ নেতাদের মতানৈক্যের মধ্যে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। দলটিও ব্যাপক জনসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
২২ আগস্ট থেকে লাগাতার সভা-সমাবেশ, বিক্ষো”ভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপির মিত্র দলগুলোও একযোগে এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারে। এর আগে ১৩ আগস্ট বিদ্যুত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, ১৭ আগস্ট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সেমিনার এবং ১৯ আগস্ট জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সেমিনার করবে বিএনপি।
দলের স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে নেতাকর্মীদের চাপের মুখে দলের নীতিনির্ধারকরা এসব কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেন। রোববার ও মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন শীর্ষ নেতারা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উত্তাপ : দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রোববার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শুরুতে কর্মসূচির বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, টুকু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া ঠিক হবে না বলে মত দেন। তিনি বলেন, ধর্মঘট মানেই মাম’লা ও হয়রানি। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে গেলে নেতাকর্মীরা গ্রে’প্তার হবে। তাহলে চূড়ান্ত আন্দোলন সফল করা কঠিন হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম খান ইকবাল হাসান মাহমুদের সাথে একমত পোষণ করেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আবদুল মঈন খান তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
বৈঠকে নজরুল ইসলাম খান বলেন, হর’তাল-অবরোধ ডাকার সময় এখনো আসেনি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হবে। যখন হরতাল-অবরোধ দেওয়া ঠিক হবে না। তবে খন্দকার মোশাররফ, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর কঠোর কর্মসূচির পক্ষে যুক্তি দেন। তারা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া দিতে পারেনি বিএনপি। এ ইস্যুতে ধর্মঘট জনগণের দাবি। কেন হরতাল করা যাবে না? দুর্বলতা কোথায়?
ওই বৈঠকের পরদিন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, প্রেসক্লাব-‘আমাদের সীমানা আটকে গেছে প্রেস ক্লাব-বিএনপি অফিসে। এর বাইরে যদি যেতে না পারি তাহলে কখনোই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না। আমাদের মি”ছিল, হরতাল-অবরোধে যেতে হবে। ’
একই সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা হার্ড লাইনে না গেলে সরকারের জায়গায় সরকার থাকবে। আর আমরা জনসভা করব, অসংখ্য মামলার বোঝা হয়ে যাব। কিন্তু সরকারকে নামাতে পারব না। ‘
মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বরের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হরতাল করি না বা করতে পারি না, বিষয়টি এমন নয়। মাঝে মাঝে কেন? যথাসময়ে হরতাল কর্মসূচি আসবে। ‘
আজ বড় সমাবেশ করার চেষ্টা : বিএনপির নেতারা জানান, আজকের সমাবেশ সফল করতে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সমাবেশে ব্যাপক জমায়েতের নির্দেশ দেন।
আজকের সমাবেশের আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি। মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সমাবেশে ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানা থেকে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। ঢাকাবাসী যারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় তারাও আসবেন। মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান জানান, বৃহস্পতিবার স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, সমাবেশ থেকে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে রোববার ও মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে বিএনপির শরিক দলগুলোও অংশ নিতে পারবে।
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শেষ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে জনসভায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করা হয়।
উল্লেখ্য, বিএনপি’র নেতারা বলছেন বর্তমানে আন্দোলনে গেলে অনেক নেতাদের গ্রেফতার করতে পারে দলীয় সরকারের অধীনে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। যার কারণে পরবর্তীতে জোরালো আন্দোলনে এসমস্ত নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারবে না। তাই সেই সময়য় আন্দোলন না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে। এদিকে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এখনই আন্দোলনের নাম না নামলে পরবর্তীতে আর কিছু হবেনা এমনটি বলছেন।