বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে সরকার, এমনটাই দাবি করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। হঠাৎ করে তেলের দাম ৪০ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে দেওয়ায় সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। অনেকেই বলছেন সরকারের এমনটি করা উচিত হয়নি, সরকার এক ধাপে না বাড়িয়ে কয়েক ধাপে বাড়ানো যৌক্তিক ছিল। এবার এ বিষয়ে যৌক্তিকতা দিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
কারণ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়নি মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমালে দেশের ভোক্তারা এর সুফল পাবেন।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের বন্ড লাইসেন্স আবেদন মডিউলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।
হঠাৎ করে এত দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কী এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থা কী? এখানে যে দাম বাড়ানো হয়েছে তা যুক্তি ছাড়া বাড়ানো হয়নি। বারবার দাম বাড়লে মানুষের কাছে একটা টার্গেট থাকে- সেটা কতটা বাড়বে, কতটা সহ্য করতে পারবে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশের বাজারে দাম কমবে।
স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করা হবে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। কিন্তু আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করছি। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে চালু করা হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশের ভোক্তারা এর সুফল পাবেন। সারা বিশ্বে তেলের দাম কমছে। আমরাও কম দামে কেনা শুরু করেছি। এগুলো যখন দেশে আসবে আমাদের কোনো চাপ থাকবে না। আমি মনে করি, দেশের ভোক্তারা কম দামে ব্যবহার করতে পারবেন।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা ঠিক, তবে কখনো কখনো ভালোর জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, বন্ড লাইসেন্সের আবেদন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্সধারীদের আরও বেশি সেবা প্রদান এবং সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালে নেওয়া হয়েছিল৷ কাজটি ২০২৩ সালে শেষ হবে৷ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় এবং সময় হ্রাস পাবে এবং সেবা সরবরাহের প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে৷
প্রসংগত, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মানুষের প্রতি খেয়াল রেখে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বলেছেন। জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করার জন্য তিনি যে যুক্তি দেখিয়েছেন সেটা অনেকের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। তবে রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকার দাম বাড়িয়েছে সেটা উল্লেখ করলেও সরকারের প্রতি দোষারোপ করছে জনগণ। এদিক দিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন সরকারের উচিত সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা করা, যাতে করে সঙ্কটে পড়তে না হয় জনগণকে।