পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন হতে আর মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি, আর এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে কাউন্টডাউন। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে অনেক রাজনৈতিক দলের মুখে অনেকটা ছাই পড়ার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পর অনেক রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি অনেকটা চুপ থেকেও মাঝে মাঝে সমালোচনা করে যাচ্ছে।
কখনো বিরোধিতা, কখনো দুর্নীতির অভিযোগ, কখনো সেতুর পেছনে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করছেন। দলটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্বব্যাংক প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন কেউ কেউ। আর জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন তো প্রকাশ্য নেতাকর্মীদের সেতুতে উঠতে মানা করেছেন।
পদ্মার তীরে জাতীয় সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে যে সেতুটি আজ দাঁড়িয়ে আছে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কম কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি। বিশ্বব্যাংকের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে লক্ষ্য করে একের পর এক রাজনৈতিক নেতারা অনেক তো’পের মুখে পড়েছেন।
২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতু কি হচ্ছে? হচ্ছে না। এ সরকার পদ্মা সেতুও করতে পারল না।’
পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি একই ধরনের মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি আবারো বিদ্রুপ করে বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে পদ্মা সেতু আর হবে না। আর যদি সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানায়, সেই সেতুতে কেউ ওঠতে যাবেন না। অনেক রিক্স আছে।’
পিছিয়ে নেই দলের অন্য নেতারাও। তারাও বেগম জিয়ার বক্তব্যের সমর্থনে সুর মেলাতে থাকেন। বিএনপি মহাসচিবের দাবি, পদ্মা সেতু টিকবে না। ১১ জানুয়ারি তিনি বলেছিলেন, “‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল নকশায় পদ্মা সেতু তৈরি হলে তা টিকবে না। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে (ভুল) নকশায়।’
তবে বিশ্বব্যাংক প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য বেশ আ/’গ্রা”সী হয়ে ওঠে। ঋণ বাতিলের ঘোষণার দিন বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, নানা চেষ্টার পরও আওয়ামী লীগের আমলে পদ্মা সেতু হবে না। প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারকে দুর্নীতির কাঠগড়ায় দাঁড় করান।’
২০১২ সালের ১লা জুলাই খালেদা জিয়া বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। সেতুর কাজ শুরুর আগেই সরকার ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। তাই এই সরকারের আমলে পদ্মা সেতু আর হবে না।’
দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার। সমালোচনা করা হয়, বিকল্প অর্থায়ন অনুসন্ধানের। এতে বলা হয়, দুর্নীতির জন্য সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। এই সরকার এখন তার দুর্নীতির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।”
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সরকারের লক্ষ্য সেতু নির্মাণ নয়, সরকারের ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতি করাটাই এখন লক্ষ্য।
২০১২ সালের ১৫ জুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর নামে নির্বাচনী তহবিল করতে চায় সরকার। সেতু নির্মাণের নামে টাকা তোলার নতুন ব্যবসা শুরু করেছে। পদ্মা প্রকল্প আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ।
কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ছিলেন বিএনপি নেতারা।
আর পদ্মা সেতু যখন রূপ নিল, তখনও বিদ্রুপ থামেনি। চলতি বছরের ২৬ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, আজ পদ্মা সেতুতে ওঠার আগে আবার বাঁশ দিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আবারও নিজের কৃতিত্ব নিতে চাইছেন। ৫ জুন তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পদ্মার দুই তীরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পর বিশ্ব দেখলো, বাংলাদেশ বড় ধরনের প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। আর এটা বিশ্ব দরবারে উপস্থাপিত হলো। পদ্মা সেতু বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল। বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন বাতিল করার পর বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে এই প্রকার এই বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেন, যেটা দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের মতো বিষয়।