Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / জেলে গেলেও কয়েদিরা পাচ্ছেন বাড়ির সকল সুবিধা

জেলে গেলেও কয়েদিরা পাচ্ছেন বাড়ির সকল সুবিধা

এবার দেশের কারাগারগুলোতে বাড়ির প্রায় সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবেন এবার তেমন আইন করতে চলেছে সরকার। এই বিষয়ে প্রায় সকল কার্যক্রম শেষ করেছে মন্ত্রণালয়। কারাগারে কয়েদিরা বাড়ির মতো সুযোগ সুবিধা পাবেন সেখানে কেনাকাটা, পড়াশুনা করার সুবিধাসহ কয়েদিরা যাতে তাদের ভবিষৎ জীবনে ভালো কিছু করতে পারে সেই সকল প্রশিক্ষণের সুবিধা পাবে। এই পদক্ষেপ অনেক আগে থেকে বিবেচনায় নিয়েছিল সরকার, এবার সেটা কার্যকর করতে চলেছে সরকার।

দেশের কারাগারগুলোকে ‘সংশোধনাগার’এ রূপান্তর করা হচ্ছে। প্রতিটি রুমে মানসম্মত বিছানাপত্র। পর্যাপ্ত আলো ও বিশুদ্ধ বাতাস থাকবে। স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনের সুযোগ থাকবে। নির্দিষ্ট দূরত্বে আবর্জনা রাখার বাক্স (বিন) থাকবে। আবহাওয়া অনুযায়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পোশাক-পরিচ্ছদ এবং বিছানাপত্র দেওয়া হবে। বন্দীর ঘুমানোর জায়গার মেঝে অবশ্যই সপ্তাহে অন্তত একবার জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। বন্দীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স থাকবে। কাউন্সেলিং সহ উন্নত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকবে। বন্দীদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক গ্রন্থাগার এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে। বন্দীর চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি গুরুত্ব পাবে। বন্দীদের শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডের সুযোগ করে ‘বাংলাদেশ কারাগার ও সংশোধনমূলক সেবা আইন-২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগ। প্রস্তাবিত আইনের খসড়া শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের কারাগারগুলো নিজেদের বাড়ির সুবিধা পাবে। কারাগারে বন্দিরাও একজন নাগরিকের সুবিধা ভোগ করবেন।

খসড়ায় যা আছে: প্রস্তাবিত কারা এবং সংশোধনমূলক পরিষেবা আইনে বলা হয়েছে বন্দীদের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতির প্রতি যথাযথ সম্মান দেওয়া উচিত। কারা কর্তৃপক্ষ কারাগার ব্যবস্থাপনার দৈনিক সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ করবে যাতে বন্দীরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারে। বন্দীরা তাদের নিজেদের পড়ার সুবিধার জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত ধর্মীয় বই তাদের হেফাজতে রাখতে পারে। বিধি মোতাবেক বন্দিরা ব্যাংক চেক ও অন্যান্য আইনগত দলিলে স্বাক্ষর, টিপসই প্রদান করতে পারবেন। মহিলা বন্দীদের জন্য বেষ্টনী সহ একটি পৃথক ভবনে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ এমন হওয়া উচিত যাতে কারাগারের অন্য অংশ থেকে তাদের দেখা না যায়। নারী বন্দিদের বেষ্টনীতে তল্লাশির জন্য কোনো পুরুষ প্রবেশ করতে পারবে না।

খসড়া আইনে মৃ”ত্যুদ/ণ্ডপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত, বিচারাধীন, নারী, পুরুষ, কিশোর ও বিদেশিসহ ১৭ ধরনের বন্দির জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। শি”শু বন্দীদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্ক বন্দীদের আলাদাভাবে রাখতে হবে। তাদের ন্যূনতম আকার এবং মানসম্পন্ন ভালো মানের বিছানাপত্র এবং পোশাক সরবরাহ করা উচিত। যেখানে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম আলো এবং তাজা বাতাস প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল সরবরাহ করা উচিত। বন্দীদের পোশাক ও বিছানার স্বাস্থ্যসম্মত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা এবং সেইসাথে কাপড় ধোয়ার জন্য সাবান ও সেলাইয়ের উপকরণের ব্যবস্থা। কর্তৃপক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে, বিচারাধীন বন্দীদের কারাগারের বাইরে অতিরিক্ত পোশাক কেনার সুযোগ থাকবে। প্রতিটি কারাগারে নির্ধারিত পদ্ধতিতে এক বা একাধিক ক্যান্টিন থাকতে হবে। যাতে বন্দিরা ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন।

স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, গর্ভবতী নারী, নবজাতক বা মায়ের সঙ্গে থাকা শি”শুরা তাদের বিশেষ স্বাস্থ্য চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। স্বাস্থ্যসেবার মান জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি এবং মানগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। প্রতিটি কারাগারে একটি হাসপাতাল থাকবে। সর্বদা প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার এবং অন্যান্য চিকিৎসা সহায়তা স্টাফ থাকবে। নারী বন্দীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী চিকিৎসক ও সহায়ক স্টাফ থাকবে। কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বন্দীর কল্যাণ, মানসিক ও শারীরিক উৎকর্ষতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।

শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের বিষয়ে বলা হয়েছে, বন্দিদের উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের জন্য কারাগারের অভ্যন্তরে শিক্ষা, কারিগরি দক্ষতা ও আইনি সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রতিটি কারাগারে লাইব্রেরি থাকবে। প্রয়োজনে জেল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পাবলিক লাইব্রেরি ও সরকারি পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ করতে পারবে। কারাগারে প্রশিক্ষণ শুরু করা একজন বন্দী মুক্তির পরেও প্রশিক্ষণ কোর্সটি সম্পূর্ণ করার সুযোগ পাবেন। এই কোর্সটি বন্দীর অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যত চাকরির যোগ্যতা হিসেবে স্বীকৃত হবে। দেখা গেছে, কারাগারে কাউন্সেলিং তো দূরের কথা, চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। কারা অধিদপ্তরের অধীনে দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৪৫০ জন। তবে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার। তাদের জন্য আছেন মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক। ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্টের ১৭৩টি পদের মধ্যে ১২২টি শূন্য রয়েছে। কারা অধিদপ্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে এবং সিভিল সার্জনের মাধ্যমে ডেপুটেশনে ১০৫ জন ডাক্তারকে সংযুক্ত করে। এরা সবাই অভ্যন্তরীণ নয়। অনেকে সকালে সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসে বিকালে ডিউটিতে চলে যান। ফলে বিনা চিকিৎসায় বন্দি মা”/রা যাওয়ার অভিযোগ কম নেই।

বিভিন্ন কারাগারে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি তদন্ত হয়েছে। এসব তদন্তে কারা ক্যান্টিনের অনিয়ম, বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ-বাণিজ্য, সিট-বাণিজ্য, খাবার-বাণিজ্য, চিকিৎসা, পদায়ন, জামিন-বাণিজ্যের মতো দুর্নীতির বিষয় উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু অসাধু কারা কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এর সঙ্গে জড়িত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট খাত চিহ্নিত করে কারা ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইন ও পরিকল্পনা) শওকত মোস্তফার নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে গৃহীত তথ্য-প্রমাণের আইনি স্বীকৃতি, প্রযুক্তিভিত্তিক কারা পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে সিসিটিভি ক্যামেরা চালুসহ ১৫টি দফা সুপারিশ করা হয়। কারাগারের নাম সংশোধন এবং সাক্ষাৎকার প্রার্থীদের এনআইডি সত্যায়িত ফটোকপি, মোবাইল নম্বর ও ছবিসহ সম্পূর্ণ বায়োডাটা প্রদানের ব্যবস্থা। সেসব সুপারিশের আলোকে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ কারাগার ও সংশোধন সেবা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

তবে এখন এটা দেখার বিষয় সরকারের এই ধরনের কারা সুযোগ দেওয়ার পর বাংলাদেশের অপরাধ প্রবনতা কতটুকু বাড়ে। এই সকল সুযোগ দেওয়ার পর অপরাধ প্রবনতা বাড়বে কিনা সেটা নিয়েও নানা কথা বলেছেন অপরাধ বিশ্লেষকেরা। তবে বাইরের অনেক দেশে এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে বলে জানান তারা।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *