জুলাই বিপ্লব নিয়ে প্রদর্শনী করে প্রশংসায় ভাসছে শিবির

‘গণঅভ্যুত্থানের পূর্বাপর’ শীর্ষক দেশের প্রথম প্রদর্শনী আয়োজন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টাশালী অডিটোরিয়ামে ৭ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা এই প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছে।

প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মৃতি। শহীদদের রক্তমাখা চিত্র, আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের চিত্রসহ ছাত্রশিবিরের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শনীর একটি দেয়ালে শহীদদের নাম দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে এবং মাঝখানে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘জন্মভূমি অথবা মৃত্যু’। প্রদর্শনীতে জুলাই বিপ্লব ও শহীদদের জীবন নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি বারবার সম্প্রচার করা হয়েছে।

এতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ উপস্থিত হন। আয়োজনে কোনো প্রবেশ ফি রাখা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, “জুলাই বিপ্লব প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের। আমরা গত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের প্রত্যেক ভুক্তভোগীর কাহিনি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এতে যেমন বেগম খালেদা জিয়ার কথা এসেছে, তেমনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার জামায়াত নেতাদের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই—বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শক্তি যেন আর কখনো মাথাচাড়া দিতে না পারে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “জুলাই বিপ্লবের শহীদরা বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাদের চেতনাকে জাগ্রত রেখে সেই আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এই প্রদর্শনী সেই চেতনা জাগিয়ে তোলার প্রয়াস।”

প্রদর্শনীতে ইতালির ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার গ্যাব্রিয়েল ইশেকনি উপস্থিত হয়ে বলেন, “এমন ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের প্রয়োজন। বিভক্তির পরিবর্তে ঐক্যের পক্ষে আসা উচিত। এ ধরনের আয়োজন বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও শহীদদের ত্যাগের স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে এমন আয়োজন সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে।


পালিয়ে যাওয়া আ.লীগের মন্ত্রী-এমপিদের দেখা মিলল লন্ডনে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে গত ৫ আগস্ট ভারতের দিকে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গেই আত্মগোপনে চলে যান দলটির বেশ কিছু নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এতদিন তাদের অবস্থান অজানা থাকলেও, সম্প্রতি তাদের কয়েকজনকে লন্ডনে দেখা গেছে।

৮ ডিসেম্বর, রোববার বিকেলে লন্ডনের ইস্ট লন্ডনের ইম্প্রেসন ভেন্যুতে একটি ভার্চুয়াল সমাবেশে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং এক সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

প্রকাশ্যে দেখা মেলে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের।

আব্দুর রহমান ছিলেন ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য, শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি, এবং হাবিবুর রহমান হাবিব ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে অন্তত ১,৫৮১ জন নিহত এবং প্রায় ৩১ হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন। আহতদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে হাত, পা, বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এই আন্দোলনের মধ্যেই শেখ হাসিনা এবং তার দলের অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। তবে, লন্ডনে তাদের উপস্থিতি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।