সোমবার থেকে বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ সেন্টিমিটার। এ সময় জেলায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, পানির উচ্চতা একটু বাড়লেও আগের মতো পরিস্থিতি থাকবে না। আগামী ৪৮ ঘন্টা বিরতি দিয়ে হালকা বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন্যায় সব হারিয়ে বাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘরে শিশু সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন কাটছে খালেদা বেগমের। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বসতঘর এবং আসবাবপত্র। স্বামী সন্তান নিয়ে বন্যার প্রবল স্রোত থেকে কোনোরকম জীবন নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। ভয়াবহ সেই রাতে কথা মনে করলে এখনো ঘুম হয় না। বাঁধের ওপরে কাটানো দু্ঃসময়ের এক একটা রাত এক বছরের সমান জানালেন খালেদা। চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দোয়ারাবাজার। সিলেটের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডার খাল বাঁধের ওপর খালেদা বেগম ও গোলাম মোস্তফা দম্পত্তি বসবাস করছেন। উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে তাদের বাড়ি। দুই ছেলেকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে একটি ছেলে সন্তান নিয়ে গত ১১ দিন ধরে বাঁধের ওপরে রয়েছেন তারা। খালেদার স্বামী মোস্তফা দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন পার করছি। বন্যার পানি আমার সব নিয়ে গেছে।
প্রবল স্রোতে ঘরে পানি ঢুকে গলা সমান হয়েছে। তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে পাড়ে চলে এসেছি। কিছুই সঙ্গে আনতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, স্ত্রী খালেদার পেটে অনাগত সন্তান। দিনের পর দিন অর্ধাহার, অনাহারে থাকতে হচ্ছে। অনাগত সন্তান নিয়ে আমাদের চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। খালেদা বেগম বলেন, বাঁধের ওপরে কাটানো রাত আমার কাছে একেকটা বছরের সমান। সে রাতের কথা মনে হলে শরীর শীতল হয়ে যায়। এভাবেই কি থাকা যায়। না খেয়ে থাকতে থাকতে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। পেটের বাচ্চার নড়াচড়া নেই। আমরা বড় অসহায়। সরকার যদি এই বিপদে না দেখে তাহলে আমরা কই যাবো। ভয়াবহ এই বন্যায় খালেদা বেগমের মতো সুনামগঞ্জে হাজারও পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন জানা নেই তাদের। এক্ষেত্রে সরকারে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে সুদিন ফিরে আসতে পারে বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
উল্লেখ্য, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। সরকার জানিয়েছে, জেলায় বন্যায় সাড়ে চার লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরি মধ্যে ১৫ জন প্রয়াত হয়েছেন বলে জানা বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলার দুই-তিনটি উপজেলায় এখনো পানি রয়েছে। তবে সব জায়গায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এছাড়া সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।