বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি একটি ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঠেকাতেই শীর্ষ নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা জাতীয় পার্টির সকল পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদেরের ওপর। তাকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অনেকটা তৎপর হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে দলীয় সূত্রে। এবার জিএম কাদেরকে নিয়ে বেশ কিছু তোলপাড় করা তথ্য প্রকাশ করলেন রাঙ্গা।
জিএম কাদেরকে দলীয় কার্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। জাপা থেকে পদ হারানো এই নেতা বলেন, জিএম কাদের বিরোধী দলের উপনেতার আসনে বসতে পারবেন না।
উপজেলা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের অনুসারীদের মতবিনিময় সভায় রাঙ্গা এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (জিএম কাদের) আর সংসদে বেগম রওশন এরশাদের চেয়ারের (বিরোধী দলের উপনেতার আসন) পাশে বসতে পারবেন না। রওশন এরশাদের পাশের চেয়ারে বসবেন অন্য কেউ। এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। জিএম কাদেরের চেয়ার কেউ রক্ষা করতে পারবে না।’
রাঙ্গা বলেন, “আগামী ২৬ নভেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে। জিএম কাদের সেখান থেকে বিদায় নেবেন। জিএম কাদেরের সঙ্গে তিনজন এমপি ছাড়া আর কেউ নেই। ২৬ নভেম্বর ডাকা জাতীয় কাউন্সিলের আগে ড. রওশন এরশাদ, সাংসদরা কোন দিকে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই এ নিয়ে সন্দেহ নেই। আমরা সময়মতো আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব। বনানী ও কাকরাইল অফিস আমাদের হবে। জি এম কাদেরকে জুতাপেটা করে ওখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’
তার সঙ্গে একই কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া মসিউর রহমান রাঙ্গা জিএম কাদেরকে অবৈধ চেয়ারম্যান বলে অভিহিত করেন। পরে তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেন জিএম কাদের। গত মাসে রওশন এরশাদের পক্ষে দলের অন্যান্য পদও হারান তিনি।
জিএম কাদের মনোনয়ন বাণিজ্য করছেন অভিযোগ করে রাঙ্গা বলেন, ‘জিএম কাদের জাতীয় পার্টির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে মনোনয়ন বাণিজ্য করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫ কোটি ৫ কোটি করে টাকা নিচ্ছেন। আবার বিএনপির জোটে যাবেন, সে জন্য টাকা নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে, সেখান থেকেও টাকা নিচ্ছে। দুই নৌকায় পা দিয়ে রাজনীতি হয় না। জিএম তা করছে। জি এম কাদের আপনার কত টাকা প্রয়োজন? সরকারের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। টাকাগুলো কী করছেন?’
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, “জিএম কাদের কখনোই রাজনীতিবিদ ছিলেন না। পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কর্মচারী ছিলেন। সেখান থেকে রাজনীতিতে আসেন। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের দুর্নীতির কারণে চাকরি হারান। কিন্তু তিনি নিজেকে একজন ক্লিন ইমেজ হিসেবে দাবি করেন। পেছনে জনবন্ধু লেখেন। তার নির্বাচনী এলাকায় ‘জনশত্রু’ নামে পরিচিত। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এরশাদ সাহেব তাকে পাঁচবার বহিষ্কার করেছেন। সেই ক্ষোভ থেকে তিনি এরশাদ সাহেবের চিহ্ন মুছে দিতে চান।
জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম আলমের সভাপতিত্বে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক নেতা কাজী মামুনুর রশীদ, জিয়াউল হক মৃধা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, এম এ গোফরান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন রাজু প্রমুখ।
রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বেশ একটি নাজুক সময় পার করছে। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল রাজনীতিতে অনেক পেছনে ফেলে দিচ্ছে। এদিকে দলটির অনেক নেতাকর্মীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য দলটির সাথে থাকা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন। এদিকে দলটি আ.লীগের সাথে জোট ত্যাগের কথা বার বার বলছে আর যদি সেটা করে তাহলে দলটির অস্তিত্ব সংকটে পড়টে পারে বলে মনে করছেন দলের অনেক হেভিওয়েট নেতারা।